Friday, July 29, 2016

অজানা টিনটিন - মাশরুম কাণ্ড

"আনন্দমেলা" - নামটা শুনলেই সেই সুদূর অতীতের একরাশ ভালোলাগার কথা মনে এসে যায়, আর সেই ভালোলাগার উৎসমূলে দেখা যায় গেঁড়ে বসে আছে সহজ, সরল ভাষায় লেখা এক অসাধারণ কমিকস - টিনটিন!! আনন্দমেলা’র সূত্রেই মাতৃভাষায় টিনটিনের সাথে আপামর বাঙালীর প্রথম আলাপ। যদিও এই পত্রিকার জন্ম ১৯৭৫ সালে, কিন্তু প্রথম যখন টিনটিনকে হাতে পাই, তখন আমি ক্লাস ফাইভ কি সিক্সের ছাত্র। রুদ্ধশ্বাসে পড়ে চলতাম টিনটিনের ‘কাঁকড়া রহস্য’. 'মমির অভিশাপ', 'সূর্যদেবের বন্দি' - টিনটিন থেকে শুরু করে কুট্টুস, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, জনসন-রনসন, প্রফেসর ক্যালকুলাস আমার মন জয় করে নিতে এক মুহূর্তও দেরী করেনি। সেই যে সেই প্রেমে পড়া, আজও অবধি সেই বেলজিয়ান সাহেব জর্জ র‍্যেমি, ওরফে হার্জে-র কমিকস-ম্যাজিকের মায়াজাল কেটে বার হতে পারলাম না - আর বাকি জীবনটুকুতেও যে পেরে উঠবো, সে ভরসাও খুব একটা দেখছি না !! টিনটিনের জন্যেই সেই সময়ে একটা ছোট্ট, সাদা কুকুরছানা পোষার জন্যে বাবা-র কাছে কি বায়নাই না করে ছিলাম! রাস্তাঘাটে টলে টলে চলা পাঁড় মাতালকে দেখেও ভালো লাগতো, স্রেফ ক্যাপ্টেনের কথা ভেবেই !!

আবার অন্যদিক দিয়ে দেখলে বলতেই হয় যে বাংলায় প্রকাশিত বোকা-বোকা, নিরামিষ কমিকসদের অসারত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো এই টিনটিনই!! পাঠকমহলে টিনটিনের কমিকসগুলির লাগামহীন জনপ্রিয়তার মূলে ছিলো গল্পগুলিতে ঘটনার অভাবনীয় চমকপ্রদতা, চরিত্রদের বৈচিত্রতা, দুরন্ত সব পটভূমিকা, অসাধারন রসবোধ, তেমনি ডিটেলস ড্রয়িং, এবং ঘটনাবলীর নিঁখুত বর্ণনা - সুপারডুপার হিট না-হয়ে যায় কোথা !! তার সাথে জুড়ে ছিলো হার্জের অনবদ্য ‘লিনেউ ক্লেয়ার’ (Ligne Claire) স্টাইল। 

গোটা দুনিয়া জুড়ে প্রায় ৭০টিরও বেশী সংখ্যক ভাষায় টিনটিনের কমিকস প্রকাশিত হয়েছে - এমন কি রুপোলি পর্দাতেও টিনটিন ভীষণভাবে জনপ্রিয়। তবে অ্যামেরিকার বাজারে টিনটিন কখনোই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি, তার একটা কারণ যেমন ছিলো টিনটিন ইউরোপীয়ান (নাক-উঁচু), তেমনি অন্যদিকে সেই সময়ে, অর্থাৎ চল্লিশ থেকে ষাটের দশকে, অ্যামেরিকার কমিকস জগৎ তোলপাড় করে রেখেছিলো 'মার্ভেল" আর 'ডি.সি. কমিকস' থেকে প্রকাশিত হওয়া একগাদা দুর্দান্ত সব ক্যারেক্টার। তাই বাইরে থেকে আর নতুন করে কোনো কমিকস ক্যারেক্টার আমদানি করার দরকার অ্যামেরিকান পাঠকদের হয়ে ওঠেনি !! 

টিনটিনকে নিয়ে তার অগুন্তি ভক্তেরা যে কি অস্বাভাবিক ধরণের পাগলামো করে থাকে সেটা অন্য আরেক দিন বলা যাবে। আমাদের আজকের এই ছোট্ট পোস্টের উদ্দেশ্য হলো এমনই এক ভক্তের মাত্রাহীন ভালোবাসার কথা তুলে ধরা। 


অজানা টিনটিন - মাশরুম কাণ্ড
টিনটিন - মাশরুম কাণ্ড (2015)

কাকা রাই (Kaka Rai) হলেন একজন ইন্দোনেশিয়ান, গ্রাফিক ডিজাইনের ছাত্র, এবং টিনটিনের এক অন্ধ ভক্ত। টিনটিনকে নিয়ে তিনি বেশ কিছু ছোটো-খাটো কমিকস প্রকাশিত করে চলেছেন। গল্পের প্লট ও ছবি আঁকা, দুয়েরই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন তিনি নিজেই। তবে এইসব সংক্ষিপ্ত গল্পগুলিকে কিন্তু হার্জের লেখা টিনটিনের মূল গল্পদের সাথে তুলনা করতে যাওয়াটা একটু বোকামিই হবে। তাঁর লেখা এই গল্পগুলির বৈশিষ্ট্য হলো যে প্রতিটি গল্পেই তিনি স্বয়ং নিজে টিনটিনের সাথে আছেন, ঠিক যে রকমটি ভাবে আমরা আমাদের কিশোর বয়সে টিনটিনের সাথে মনে মনে রোল-প্লে করে খেলে চলতাম আর কি !!

সেই রকমই একটি ছোটো গল্প আজ বাংলায় অনুবাদ করে এখানে দেওয়া হলো। এই কমিকসটির প্রচ্ছদপট অলংকরণে সহায়তা করেছেন আমাদের সকলের প্রিয় রূপক ঘোষ মহাশয়। অনেক ধন্যবাদ ও প্রশংসা রইলো তাঁর জন্যে... 

Credits:
Script & Drawings: Kaka Rai
First Release (Blog): 2015
Translation: Kuntal & Rupak 
Baundule (7 MB)
মাশরুম কাণ্ড - টিনটিন 
   (Size: 6.2 MB)

Saturday, July 16, 2016

ছেঁড়া ঘুড়ি, রঙিন বল, এইটুকুই সম্বল...

শেষ বইমেলায় যেবার গেছিলাম তার সাল-তারিখ মনে না থাকলেও, একটা ঘটনা এখনও আমার মনে বেশ গেঁথে আছে --- রোগামতো, গলায় মাফলার জড়ানো মফস্বলী একটা ছেলে, বইয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে একমনে একটা মোটা বই হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগে দ্রুত পড়ে যাচ্ছে - খুব সম্ভবত: দেব লাইব্রেরী বা পত্র ভারতীর স্টলে। আশেপাশের লোকজনদের কথাবার্তা, লাউডস্পীকারের তারস্বরে চিল্লানি, বা সেজেগুজে আসা উচ্ছল তরুণীদের দল, কোনোকিছুই তার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারছে না। সহসাই যেন মনে হলো আমি টাইমমেশিন করে সুদূর অতীতে ফিরে গিয়ে, সতেরো বছর আগেকার সেই 'আমাকেই' যেন আড়াল থেকে দেখে চলেছি !! কিছুক্ষন বাদে বইপড়া শেষ হয়ে গেলে সে বইটি যথাস্থানে সযত্নে গুঁজে রেখে, সাইডব্যাগ বগলে করে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো ! আর তার সাথে দেখা না হলেও আমি স্থির জানি যে সে আরো বেশ কয়েকটি স্টলে গিয়ে একইরকম ভাবে বই-গিলে, মেলার শেষ প্রহরে বড়োজোর দুটি কি তিনটি সরু-সরু বই কিনে নাচতে নাচতে, বাসে করে ঝুলে বাড়ি ফিরে যাবে। এর থেকে বেশী নতুন বই কেনার ক্ষমতা তার নেই। 


ছোটবেলায় বইপড়ার (কু)নেশাটা মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন আমার বাবা স্বয়ং নিজেই। মধ্যবিত্তের বিশাল সংসারে বেসরকারি অফিসে কাজ করে, লোন নিয়ে বাড়ি করার সাথে সাথে, কি অবিশ্বাস্য দু:সাহসের পরিচয় দিয়ে যে তিনি নানান জায়গা থেকে অজস্র পুরানো গল্পের বই কিনে আনতেন, তা আজ ভাবতেই অবাক লাগে !  


প্রথম প্রকাশ: মহালয়া আশ্বিন, ১৩৫৮ (দেব সাহিত্য কুটীর)

পুজোর সময় নতুন জামা-কাপড় হোক বা না-হোক, ছেলেমেয়েদের হাতে তিনি নিয়ম করে ঠিকই তুলে দিতেন দেব সাহিত্য কুটীরের মোটা মোটা পূজাবার্ষিকী - যেগুলোর বেশিরভাগই কেনা হতো ঢাকুরিয়ার কাছে, গোলপার্কের পুরানো বইয়ের দোকানগুলো থেকে। দর-দাম করাও যে একটা উচ্চতর আর্টের পর্যায়ে চলে যেতে পারে সেটা নিজের চোখে না-দেখলে, লিখে ঠিক বোঝানো যাবে না !! শরতের পুজোর উচ্ছলতার আনন্দের সাথে মিশে যেতো সাহিত্যপাঠের অনাবিল আনন্দ। 
    
নগর জীবনে হাজার ব্যস্ততার ভিড়ে আজ আমরা বই পড়তেই ভুলে গেছি। বই পড়ার জন্যে সাজ-সরঞ্জামের অভাব আমাদের নেই - পকেটভর্তি টাকা আছে, অ্যামাজন-ফ্লিপকার্ট আছে, কিন্ডল আছে, আইপ্যাড আছে - নেই শুধু ছেলেবেলাকার ফেলে আসা পড়ার সেই  মনটা... 
 ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~

আজকের এই পোস্টে রইলো আজ থেকে প্রায় ৫৫ বছর আগেকার দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত বিস্মৃতপ্রায় এক পূজাবার্ষিকী, 'অভিষেক' (১৩৫৮ সাল) থেকে তিনটি অমূল্য গল্প - 

   ১) ব্যাঘ্রভূমির বঙ্গবীর - শ্রীহেমেন্দ্রকুমার রায় 
   ২) মাউই-এর উপাখ্যান - প্রেমেন্দ্র মিত্র 
   ৩) সত্যবাদিতার পুরস্কার - শিবরাম চক্রবর্তী  

বইটির অবস্থা দেখতে যতোটা না করুণ লাগছে, বাস্তবে এর চেহারা কিন্তু শতাধিক বেশী করুণ !!



অভিষেক (তিনটি গল্প)
(SIZE: 11.4 MB)




Monday, July 4, 2016

নিঝুমপুর - তারাপদ রায়

"নদী থেকে উঠে আসে পথ,     
না কি পথ নেমে যায় নদীর ভিতরে ?  
. . .তবুও কেন যে মনে মনে
থেকে যায় কাঁচা রাস্তা, ভাঙা পাড়  
অমল কাদায়        
পথ ও নদীর মধ্যে পড়ে থাকে
পাখির পালক..."  


স্কুলজীবন ছেড়ে কলেজজীবনে ওঠার সেই গোলমালে ভরা সময়ে কি কারণে না-জানি আমি তারাপদ রায়ের লেখার বেশ ভক্ত হয়ে গেলাম - আসল কারণটা আমি ঠিক এখনও ধরে উঠতে পারিনি। তারাপদ রায় মূলত: ছোটোখাটো হাসির গল্প, যাকে 'রম্যরচনা' বলা হয়ে থাকে, সেই ধরণের 'আলতু-ফালতু' লেখা লিখে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছু কবিতা এবং ছোট-বড় গল্পও তিনি লিখেছিলেন -  তবে বাঙালীর নাক-উঁচু সাহিত্যিক জগতে কেউকেটা হয়ে উঠতে তিনি কখনোই পারেন নি, বা চানও নি। সে যাই হোক, একসময় দেখা গেলো একটা-দুটো করতে করতে, কলেজ স্ট্রীট থেকে তারাপদ রায়ের হাবিজাবি লেখা প্রায় সবকটা বইই আমি কিনে কিনে আলমারি ভরে ফেলেছি। শুধু বই কেনাই নয়, সদ্য কেনা নতুন বইয়ের কভার বাঁচানোর জন্যে আমি যথেষ্ট সময় নষ্ট করে সাদা প্লাস্টিকের ট্রান্সপ্যারেন্ট কভার দেওয়াও চালু করে দিয়েছি। 

আলো-আঁধারি ভরা সন্ধ্যাবেলা, কি ঝুপঝুপে বৃষ্টির দিন, তারাপদ রায়ের একখানা বই হাতে করে নিয়ে বসলেই সময় কেটে যেতো হু হু করে - বিশেষ করে প্রথম যৌবনের সেই ব্যাচেলর-কাম-বেকার জীবনে, কারণ-অকারণে ধেয়ে আসা নাম-না-জানা, মন-ভার করা বিষণ্ণ সময়গুলোকে মেরামত করে তুলতে তারাপদ রায়ের লেখার কোনও জুড়ি ছিলো না !

নিঝুমপুর
প্রথম প্রকাশ: বইমেলা 1998 (১৪০৪)
প্রচ্ছদ: সুধীর মৈত্র
 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবন অনেকটা পানসে হয়ে যায় - সেই সোনালী সময় গেছে হারিয়ে, রাগ-অনুরাগে ভরা সেই মধুর জীবন চলে গেছে আজ বেশ কয়েক বছর হলো, তবু বার বার সেই সময়কার কথা ঘুরে ফিরে আসে মনের মধ্যে। আজ যখন প্রতিটা দিনকে সন্ধ্যের দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে আলো ছায়াভরা পথগুলোর দিকে পা বাড়াই, মন চলে যায় পিছু ফিরে সেই হারানো অমলিন ক্ষণগুলোতে...

~ ~ ~ ~ ~ ~ ~

পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরদিনের মত নিশ্চিহ্ন পূর্ববঙ্গের নদীতীরের পঞ্চাশ বছর আগের পল্লীজীবন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পটভূমিকায় গ্রামবাংলার একটি নিষিদ্ধ প্রেমের কাহিনী নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্ট।   

এরকম লেখা তারাপদ রায় আগে খুব একটা লেখেন নি - লেখা উচিত কিনা সেটা না'হয় পাঠকেরাই বিবেচনা করুক...


নিঝুমপুর 
(Size: 19 MB)