Friday, January 15, 2016

বগলামামা যুগ যুগ জিয়ো!

"দশটা সাগর বারোটা দেশ       
 পার হয়েছি হাওয়াই যানে 
পরবাসী তবু জানে,        
     দেশ পেরোনো ঠিক যায় না ..."  
(অমিয় চক্রবর্তী )  



ছোটবেলায় রবিবারের দিনগুলি শুরু হতো বেজায় আনন্দের সাথে। তার একটা কারণ ছিলো রবিবারে একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠলে, বা একটু দেরী করে পড়তে বসলেও বাড়ি থেকে বিশেষ কেউ আপত্তি করতো না। তার সাথে যদি বাবার সাথে বাজারে যেতে হতো, তা'হলে তো সোনায় সোহাগা - পুরো সকালবেলার পড়াটাই আইনসম্মত ভাবে ডিসমিস হয়ে যেতো! দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকে গেলে আমরা বসে পড়তাম এক একটা গল্পের বই হাতে করে। তবে আলমারী থেকে দেব সাহিত্য কুটীরের মোটা মোটা পূজাবার্ষিকী বার করার স্বাধীনতা ছিলো না। তার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করে থাকতো হতো ডিসেম্বরে অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি। মহালয়ার সময় পূজাবার্ষিকী বার হলেও প্রতিবছর নিয়ম করে কেনা ঠিক সম্ভব হয়ে উঠতো না - তাই পুরানো পূজাবার্ষিকীগুলোই ছিলো আমাদের 'সবেধন নীলমণি'। এখন পিছু ফিরে ভাবলে দারুণ অবাক লাগে যে কি সামান্য, ছোটো ছোটো আশা ও চাহিদা নিয়ে সেই সেদিনের আমরা বড়ো হয়ে উঠেছিলাম।    



একসময় আমাদের সংগ্রহে দেব সাহিত্য কুটীর থেকে প্রকাশিত পূজাবার্ষিকীগুলির প্রায় সবকটিই ছিলো, অন্তত: প্রধান বইগুলি তো বটেই। সেই বইগুলির বেশ কিছু বই উইপোকা খেয়ে নষ্ট করে ফেললেও এখনো প্রায় খান-তিরিশেক বই বেঁচে আছে। কিছু কিছু বই অন্যেরা নিজের মনে করে নিয়ে গিয়ে আর ফেরৎ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। 
দেব সাহিত্য কুটীর থেকে আমার সংগৃহীত বইদের একাংশের ছবি...
'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে' কথাটা সর্বযুগে, সর্বসময়ে সত্যি। তাই নতুন বইয়ের সাথে পুরনো বইগুলিও আপাতত: যত্ন করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে রেখে এসেছি। 

~ ~ ~ ~ ~ 
এই সপ্তাহের পোস্টে রইলো রাজকুমার মৈত্রের লেখা 'বগলামামা'- আরেকটি দারুণ হাসির গল্প: 'বগলামামা যুগ যুগ জিয়ো!'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা এই গল্পটি বগলামামার অন্যান্য গল্পের তুলনায় আকারে একটু বড়ো - প্রায় ৪৪ পাতার। গল্পটির মধ্যে পাতা-জোড়া একটি রঙিন ছবিও ছিলো, কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেই পাতাটি হারিয়ে গেছে। সারা জীবনে আমার একবারই মাত্র নাটকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ এসেছিলো। স্টেজে উঠে, একগাদা দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে সামান্য কিছু একটা করার মধ্যেও যে কি বিশাল পরিমাণে ভয়-টেনশান, লজ্জা-আতঙ্ক, এবং আগ্রহ লুকিয়ে থাকে তা সহজেই বুঝতে পারি।  আর তাই এই গল্পটিকে আমার কখনোই এক বানানো গল্প বলে মনে হয় না।
বগলামামা যুগ যুগ জিয়ো! ('মন্দিরা' পূজাবার্ষিকী)

আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগে, ১৩৮৪ সালের (1978) পুজোর সময় দেব সাহিত্য কুটীর থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো "মন্দিরা" পূজাবার্ষিকীটি। অন্যান্য বছরের পূজাবার্ষিকীদের তুলনায় এই বইটির কভার-পেজ হিসাবে ছিলো দুটি চোখ জুড়ানো প্রচ্ছদ। এখনকার দিনের যেকোনও পূজাবার্ষিকীকে এর পাশে রাখলে হতাশায় হাসি আসতে বাধ্য!  অসাধারন কিছু অলঙ্করণ, সাধারন একগুচ্ছ বিভিন্ন স্বাদের গল্প এবং তিন-তিনটি চিত্রকাহিনীতে জমজমাট ছিলো এই পূজাবার্ষিকীটি। বইটির সূচীপত্রের প্রথম দিকের কয়েকটি পাতা হারিয়ে গেছে, কিছু পাতায় পোকার আক্রমণ সবে শুরু হয়েছিলো, তাই স্ক্যান করার পর বেশ কিছুটা সময় গিয়েছে একে পড়ার উপযোগী করে তুলতে। 
দেব সাহিত্য কুটীরের 'মন্দিরা' পূজাবার্ষিকী (১৩৮৪)


বগলামামার গল্পের সাথে ফাউ হিসাবে রইলো শ্রদ্ধেয় মধুসূদন মজুমদারের লেখা একটি ছোট্ট অলৌকিক গল্প: "আশ্চর্য মূর্তি" প্রাচীন সর্পদেবীর মূর্তির অদ্ভুত ক্ষমতাকে তাচ্ছিল্য করার ফল যে কি মারাত্মক হতে পারে তা নিয়েই রচিত এই গল্পটি। ছোটগল্প হলেও গল্পটির ঘটনাবলীর মধ্যে থাকা অদ্ভুত গতির তারিফ না-করে থাকা যায় না। এই গল্পটির ছবিগুলি এঁকেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ মহাশয় - ছবির সৌন্দর্যের কল্যাণেই গল্পটি পড়ার ইচ্ছা জেগে ওঠে।
মধুসূদন মজুমদার রচিত ছোট গল্প

আশা করি দুটি গল্পই সবার খুব ভালো লাগবে। ভালো-মন্দ বেশ কিছু কমেন্টস পেলে হয়তো বগলামামার বাকি কাহিনীগুলিও ধীরে ধীরে ধরা দেবে এই ব্লগে।


বগলামামা যুগ যুগ জিয়ো! 
এবং আশ্চর্য মূর্তি 
(Size: 24.2 MB)







7 comments:

  1. খুব ভালো লাগলো, দারুণ গল্প - অনেক ধন্যবাদ কুন্তল।

    ReplyDelete
  2. Khub valo laglo - onek thanks !

    ReplyDelete
  3. এই বই গুলোর সঙ্গে ছোটবেলা জড়িয়ে আছে...আমাদের পুরান বাড়িতে মামা কাকা দের ছিল...তবে আমার বই গুলো পরে কেনা ।

    ReplyDelete
  4. Onek dyonyobad...bakigulo'r opekhya'y thaklam...

    ReplyDelete
  5. বগলা মামার জন্য ধন্যবাদ। সত্যই এক বিরল লেখা আপনি উপহার দিলেন পাঠকদের।

    ReplyDelete