বাংলার কমিকস জগতে অন্যতম সেরা শিল্পীর নাম হলো 'ময়ুখ চৌধুরী' - বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অগাধ জ্ঞান, সঙ্গে অপূর্ব হস্তাক্ষর এবং বাংলা ভাষায় তাঁর অসাধারণ দখল তাঁকে গড়পরতা অন্যান্য শিল্পীদের থেকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে রেখেছিলো। ষাটের দশকে শুরু করে পরবর্তী চার দশক ধরে তিনি লিখে গেছেন অসংখ্য চিত্রকাহিনী, গল্প ও উপন্যাস।
হাস্যরস বা কৌতুকের থেকে তাঁর রচিত চিত্রকাহিনীগুলির মূল আকর্ষণ ছিলো অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা। ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর থেকে আরণ্যক পরিবেশ ও বন্যপশুদের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্ত্ব ছিলো অনেক বেশি। সেই সব কমিকসগুলিতে প্রতিটি প্রাণীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও চলাফেরার ছন্দ, গতি নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছিলো। আফ্রিকা-ব্রাজিলের জঙ্গল, সিংহ, জেব্রা, ব্ল্যাক প্যান্থার, বাফেলো, অজগর, কুমীর, বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, ইত্যাদি নানান চেনা-অচেনা জীবজন্তু তাঁর তুলির আঁচড়ে যেন জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠতো।
তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিলো "শক্তিপ্রসাদ রায় চৌধুরী" - ময়ুখ চৌধুরী ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি আরো তিনটি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন - 'সূত্রধর গুপ্ত', 'আত্মনাম গুপ্ত' ও 'রাজা রায়'। কমিকস ছাড়াও তিনি নানান গল্প-উপন্যাসও লিখে গেছেন - সেই সুবাদে তাঁকে নির্দ্বিধায় সাহিত্যিকও বলা চলে। বাংলা চিত্রকাহিনীগুলিকে তিনি দিয়েছিলেন সাহিত্যের মর্যাদা। তাই বাংলা তো বটেই, এমন কি গোটা ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ কমিকস-সাহিত্যকার বিচারে নি:সন্দেহে তাঁর নামই প্রথমে আসবে।
এই পোষ্টে প্রয়াত ময়ুখ চৌধুরীর লেখা 'বঙ্গদেশের রঙ্গ' কমিকসটি দেওয়া হলো। মানুষ ও ভয়ংকর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত ভালবাসাই হলো এই চিত্রকাহিনীটির মূল বক্তব্য। সুরেশ বিশ্বাস ছিলেন পশ্চিম বাংলার অন্তর্গত নদিয়া জেলার এক তরুণ, দু:সাহসী বাঙালী, যিনি ছিলেন হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের খেলায় সিদ্ধহস্ত। পরবর্তী জীবনে তিনি ব্রাজিলের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ও এক সময়ে "কর্নেল" পদে উন্নীতও হন। সেই বিস্মৃত বাঙালি, "কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস"-কে নিয়ে ব্রাজিলের পটভূমিকায় এক বিশ্বাসযোগ্য রোমাঞ্চকর কাহিনী গড়ে তুলেছিলেন ময়ুখ চৌধরী। এই কাহিনীটি ইতিহাস নির্ভর হলেও, এটি হলো কল্প-ইতিহাস বা আদ্যন্ত কাল্পনিক রচনা। জীবজন্তু ও ইতিহাসকে বিষয় করে সাহিত্যধর্মী বর্ণনায় করা এই রচনাটি প্রকাশ করার মাধ্যমটি ছিলো "অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার কমিকস", বর্তমানে যাকে বলা হয়ে থাকে "গ্রাফিক্স নভেল"। কাহিনীর নায়ক সুরেশ বিশ্বাসের মতোই লেখক-শিল্পী ময়ুখ চৌধরীও ছিলেন এক ব্যতিক্রমী বাঙালী, যিনি জীবজন্তু নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন - তবে তা সার্কাসের স্টেজে নয়, বরং ছবি ও গল্পের আকারে।
এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো 1970 সালে (বাংলা ১৩৭৭ সাল) দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত 'মনিহার' পূজাবার্ষিকীতে। সম্প্রতি ব্রাজিলবাসী এক কমিকস পাঠকের (Celso Nunes) অনুরোধে বাংলায় লেখা এই চিত্রকাহিনীটি আমি ইংরাজিতে অনুবাদ করে ফেলি। পরে আবার সেখান থেকেই এই কমিকসটিকে পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে। সেই বাংলা, ইংরাজী ও পর্তুগীজ, তিনটি ভাষার কমিকসই এখানে একসাথে আপলোড করা হলো। The original 'Portuguese' version can also be downloaded from cavernadacaveira.blogspot.com site.
জীবিতকালে ময়ুখ চৌধুরী তাঁর প্রাপ্য নাম-মর্যাদা, খ্যাতি-প্রশংসা, বেতন-মজুরি বা প্রচার কিছুই তেমন পান নি। মৃত্য পরবর্তীকালে তাঁর রচিত অসাধারণ চিত্রকাহিনীগুলির সাথে যদি দেশী-বিদেশী কমিকস পাঠকেরা পরিচিত হন, তাহলে তাঁর পরলোকগত আত্মা কিছুটা শান্তি ও আনন্দ অনুভব করবেন, এইটুকুই যা আমাদের আশা ও প্রার্থণা।
হাস্যরস বা কৌতুকের থেকে তাঁর রচিত চিত্রকাহিনীগুলির মূল আকর্ষণ ছিলো অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা। ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর থেকে আরণ্যক পরিবেশ ও বন্যপশুদের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্ত্ব ছিলো অনেক বেশি। সেই সব কমিকসগুলিতে প্রতিটি প্রাণীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও চলাফেরার ছন্দ, গতি নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছিলো। আফ্রিকা-ব্রাজিলের জঙ্গল, সিংহ, জেব্রা, ব্ল্যাক প্যান্থার, বাফেলো, অজগর, কুমীর, বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, ইত্যাদি নানান চেনা-অচেনা জীবজন্তু তাঁর তুলির আঁচড়ে যেন জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠতো।
তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিলো "শক্তিপ্রসাদ রায় চৌধুরী" - ময়ুখ চৌধুরী ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি আরো তিনটি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন - 'সূত্রধর গুপ্ত', 'আত্মনাম গুপ্ত' ও 'রাজা রায়'। কমিকস ছাড়াও তিনি নানান গল্প-উপন্যাসও লিখে গেছেন - সেই সুবাদে তাঁকে নির্দ্বিধায় সাহিত্যিকও বলা চলে। বাংলা চিত্রকাহিনীগুলিকে তিনি দিয়েছিলেন সাহিত্যের মর্যাদা। তাই বাংলা তো বটেই, এমন কি গোটা ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ কমিকস-সাহিত্যকার বিচারে নি:সন্দেহে তাঁর নামই প্রথমে আসবে।
এই পোষ্টে প্রয়াত ময়ুখ চৌধুরীর লেখা 'বঙ্গদেশের রঙ্গ' কমিকসটি দেওয়া হলো। মানুষ ও ভয়ংকর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত ভালবাসাই হলো এই চিত্রকাহিনীটির মূল বক্তব্য। সুরেশ বিশ্বাস ছিলেন পশ্চিম বাংলার অন্তর্গত নদিয়া জেলার এক তরুণ, দু:সাহসী বাঙালী, যিনি ছিলেন হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের খেলায় সিদ্ধহস্ত। পরবর্তী জীবনে তিনি ব্রাজিলের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ও এক সময়ে "কর্নেল" পদে উন্নীতও হন। সেই বিস্মৃত বাঙালি, "কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস"-কে নিয়ে ব্রাজিলের পটভূমিকায় এক বিশ্বাসযোগ্য রোমাঞ্চকর কাহিনী গড়ে তুলেছিলেন ময়ুখ চৌধরী। এই কাহিনীটি ইতিহাস নির্ভর হলেও, এটি হলো কল্প-ইতিহাস বা আদ্যন্ত কাল্পনিক রচনা। জীবজন্তু ও ইতিহাসকে বিষয় করে সাহিত্যধর্মী বর্ণনায় করা এই রচনাটি প্রকাশ করার মাধ্যমটি ছিলো "অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার কমিকস", বর্তমানে যাকে বলা হয়ে থাকে "গ্রাফিক্স নভেল"। কাহিনীর নায়ক সুরেশ বিশ্বাসের মতোই লেখক-শিল্পী ময়ুখ চৌধরীও ছিলেন এক ব্যতিক্রমী বাঙালী, যিনি জীবজন্তু নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন - তবে তা সার্কাসের স্টেজে নয়, বরং ছবি ও গল্পের আকারে।
এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো 1970 সালে (বাংলা ১৩৭৭ সাল) দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত 'মনিহার' পূজাবার্ষিকীতে। সম্প্রতি ব্রাজিলবাসী এক কমিকস পাঠকের (Celso Nunes) অনুরোধে বাংলায় লেখা এই চিত্রকাহিনীটি আমি ইংরাজিতে অনুবাদ করে ফেলি। পরে আবার সেখান থেকেই এই কমিকসটিকে পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে। সেই বাংলা, ইংরাজী ও পর্তুগীজ, তিনটি ভাষার কমিকসই এখানে একসাথে আপলোড করা হলো। The original 'Portuguese' version can also be downloaded from cavernadacaveira.blogspot.com site.
- বঙ্গদেশের রঙ্গ (বাংলা - 12 MB)
- Rangolaal of Bengal (English - 3 MB)
- Rangolaal de Bengala (Portuguese - 4 MB )
কুন্তলদা এটি একটি দুর্ধষ পোস্ট । খুব ভাল লাগ ল । কাজের ফাঁকে যে আপনি সময় করে এতো সুন্দর করে অনুবাদ করেন। তা অনবদ্য ।
ReplyDeleteধন্যবাদ দেওয়া মানে আপনাকে ছোটো করা ।
তবুও অনেক ধন্যবাদ আপনাকে and to celso nunes for his Portuguese translation
Thank You ! Very kind words :)
DeleteYeah, I saw. I'm getting famous here in India. Thanks, I really enjoyed the story. I agree that indeed, the tales of Mayukh Chowdhury are a unique genius. The stories are told in an exciting way, and the whim of the illustrations. Lucky for you in India, because you can have these beautiful adventures in its childjhood. I signed your blog, and now I will follow your news. It was a pleasure for me, doing this contribution to spread the work of this master of the comics.
ReplyDeleteThanks Celso and it's nice to know you too. I will try to translate few more of his stories in future.
DeleteIn my childhood days I used to like a lot one of his famous science fiction stories: "আগন্তুক" (The Visitor) - that story bears a resemblance to many of the Hollywood movie/stories. The bengali version was uploaded here -> http://indraindrajal.blogspot.com/2014/10/post-44-moyukh-choudhurys-aguntok.html
Hi Nunes,
DeleteThanks for spreading the good works of Mayukh...it would have pleased him immensely to see his works have reached other countries as well; like Kuntal pointed out, the artist did not receive his due recognition while he was alive :(