মানুষের জীবন অনেকটা নদীর মতো - বাঁক খেয়ে খেয়ে এদিক ওদিক যেতে যেতে সে অগ্রসর হয়। ঘটনার প্রতিনিয়ত: ঘাত-প্রতিঘাতে পড়ে পড়ে তার জীবনের ধারা বদলাতেই থাকে। কখনো কখনো কিছু কিছু ঘটনা সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কখনো বা উল্টোটাই হয়। যেমন আমার জীবনে বেশিরভাগ সময়েই দেখেছি আমি যা যা করবো বলে ভেবেছি, বাস্তবে হয়েছে ঠিক তার উল্টোটাই - সত্যি বলতে কি উল্টোটাই নিয়তি আমায় ঘাড় ধরে করিয়েছে। প্রেমের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা সত্যি - চেষ্টা করেও যেরকম প্রেমে পড়ার কল্পনা আমার কিশোর মন করে এসেছিলো, বাস্তবে কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। হয়তো বা এই আলোচ্য উপন্যাসের নায়ক, রাতুলের মতো ঝোঁকবশত: কিছু করে ওঠার বুদ্ধি বা সাহস সেই বয়সে সৃষ্টিকর্তা দেবার প্রয়োজনটুকুও বোধ করেন নি।
প্রেমের গল্প লেখার দৌড়ে বাংলা লেখক-সাহিত্যিকদের মধ্যে কে এগিয়ে আছেন, বা ছিলেন সেটা একটা রীতিমত তর্কের ব্যাপার। মান্না দের গান যেমন বাঙালী যুবকদের মনে প্রথম প্রেমের বীজ বুনে দেয়, তেমনি করেই কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসের হাত ধরেই বাঙালি কিশোরদের প্রেমের হাতেখড়ি সম্পূর্ন হযে যায়। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের 'লোটাকম্বল' পড়ে যেমন অভিভূত হয়েছিলাম, সমরেশ মজুমদারের 'এই, আমি রেণু' পড়েও একসময় কান্নায় গলা বুজে এসেছিলো। অতীন বন্দোপাধ্যায়ের 'ঝিনুকের নৌকা'ও এক অসম্ভব কষ্টের প্রেমের গল্প। পরিণত বয়সে হুমায়ুন আহমেদের 'হিমু' চরিত্রসহ তাঁর লেখা আরো বেশ কিছু গল্প-উপন্যাস মনকে বেশ নাড়া দিয়েছিলো। তবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রেমের গল্পগুলি ছিলো কিছুটা অন্য মাত্র্রার। জীবনের দেখা-অদেখা নানান রূপ-বর্ণ-ছন্দ, মানুষের টানা-পোড়েনে তিনি এক স্বপ্নের মায়াজাল বুনে চলতেন, ঠিক যেমন করে তাঁতঘরে বসে দক্ষ কোনো তাঁতী বিচিত্র বর্ণের সুতো দিয়ে সৃষ্টি করে চলেন অপূর্ব নকশিওয়ালা কাপড়। উচ্চ-মধ্যবিত্ত জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অ-সুখের ক্লেশ, অসূয়ার কাঁটা, অনিশ্চয়তার সংকটের মধ্যে দিয়েই তিনি দেখিয়েছিলেন কি অদ্ভুতভাবেই না ঔদাস্য রুপান্তরিত হয়ে যায় আবেগে, আর প্রত্যাখান প্রেমে...
প্রথম প্রকাশ: ১৩৯৭ (1999), ১লা বৈশাখ |
প্রথম যৌবনে পড়া এই 'গতি' উপন্যাসটি আবার করে মধ্যযৌবনে এসে পড়লাম, এবং বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম যে অনেকটা প্রথমবারের মতোই অভিভূত হয়ে পড়েছি, যদিও কাহিনীর শেষে কি ঘটতে চলেছে তা কিন্তু আগে থেকেই ছিলো জানা !!
'গতি' হলো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা অনেক পরের দিকের প্রেমের উপন্যাস। 'গতি' মানে যেমন 'চলার বেগ', আবার তেমনি 'গতি' মানে 'পরিনতি'। ছিপছিপে, মেদবর্জিত এই উপন্যাসেও ঘটনাগুলি ঘটে যায় এক অসম্ভব দ্রুততায়, এবং সুনিয়ন্ত্রিত বিন্যাসে। কাহিনীর মধ্যে দিয়ে লেখক আপন নিপুণ ভঙ্গীতে ও দক্ষ শিল্পী-হস্তে এঁকে গিয়েছেন সর্বদ্রষ্টা ও সর্বনিয়ন্তার এক অসামান্য আলেখ্য - স্থির থাকলেও নিরন্তর অব্যাহত যাঁর গতি. . . . .
গতি (প্রথম পর্ব) |
গতি (শেষ পর্ব) |
অসাধারণ একটা সাইট ধন্যবাদ :)
ReplyDeleteনা, পড়া হয়নি ।
ReplyDeleteঅনেক অভিনন্দন কুন্তলদা ১০০ তম পোষ্টের জন্য ।
ReplyDeleteporer অংশের অপেক্ষায় রইলাম ।
আরো সুন্দর সুন্দর বই + কমিকস + আপনার সুন্দর লেখা বইটির ওপর । চলতে থাকুক ।