Pages

Saturday, January 9, 2016

বগলামামা ফিরে এলো - জিয়া ঘাবড়াকে

"ফিরে আসার মতো কিছু নেই -  
পুরনো পর্দা, ময়লা বিছানা,      
দরজার সামনে পাপোশে নীল পদ্মফুল,      
ফিরে আসার মতো কিছু নেই... 

কিছুই ফেলা যাবে না, কিছুই ভোলা যাবে না,    
কিন্তু, ফিরে আসার মতো কিছু নেই -    
পুরনো পর্দা, ময়লা বিছানা,      
বালিশ তেমন নরম নয়,      
বালিশ তেমন শক্ত নয়,      
     তবুও ফিরে আসার মতো কিছু নেই..."  

দীর্ঘ কয়েকবছর বাইরে থাকার পরে যখন গত ডিসেম্বরে মাস খানেকের জন্যে দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকে, অবজ্ঞা ভরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন পৃথিবীটা অ্যাত্তো বিশাল তবু আমরা, মানে বিশেষ করে 'কোলকাতার বাঙালিরা' খালি দেশে গিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাড়িতে পড়ে থেকে সময় নষ্ট করি কেন? প্রশ্নটার উত্তর আমি এখনও সঠিক জানিনা - কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো প্লেনে উঠে সীটে বসে, সীটবেল্ট লাগিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে শরীর এলিয়ে দিতেই মনে হলো বাড়ি ফেরার মতো আনন্দের আর কিছু হতে পারেনা। পৃথিবীর ঠিক অপরপ্রান্তে থাকা, জগৎসংসারের অভাবী, দরিদ্র পৃথিবীর এক ঘিঞ্জি শহরে ধূলিধূসর, ভগ্নগবাক্ষ আমার দেশের বাড়ি, সেখানে অপেক্ষা করে রয়েছে আমার প্রিয়জনেরা... তাই, ফিরে আসার মতো কিছু নেই...

জিয়া ঘাবড়াকে
"আঁখিয়া মিলাকে জিয়া ঘাবড়াকে চলে নেহি জানা - ও-ও-ও চলে নেহি জানা..."
বাইরে থেকে দেশে ফিরে আসাটা কিছুটা জেনে-বুঝে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো - রাস্তাঘাট সব বদলে গেছে, মাঠঘাট সব হাওয়া, চারিদিকে নোংরা আবর্জনা, পলিউশান আর জঞ্জালে ভরা নর্দমা আর গলিপথ, সব থেকে বদলে গেছে 'মানুষেরা' - আগেকারদিনের সেই সব মমতায় ভরা, কর্ম-ব্যস্ততায় মশগুল, সদাহাস্যময় মুখগুলো বেমালুম সব হাওয়া !! বয়স্ক গুরুজনদের ক্রমভগ্নমান অবস্থা দেখার পরে সব থেকে মন খারাপ হয়ে গেলো যখন জানতে পারলাম উইপোকার আক্রমণে আমার দীর্ঘকালব্যাপী বন্ধ থাকা ঘরটির অবস্থা চরম শোচনীয় !! বিছানা-গদি, বালিশ-তোষক, জামা-কাপড় থেকে আরম্ভ করে বইখাতা, এমনকি সিডি-ক্যাসেটগুলিও উইয়ের আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায়নি !! স্রেফ বিয়েতে পাওয়া খাটের ফ্রেমদুটি সেগুন কাঠের ছিলো বলে, সে'দুটিতে উই দাঁত ফোটাতে পারেনি। বেশ কিছু নতুন বই আমি একটা টিনের আলমারিতে ন্যাপথলিন পুরে রেখে দিয়ে গেছিলাম, তাই সেগুলি ঠিকঠাকই প্রায় ছিলো, কিন্তু গোচ্ছা-গোচ্ছা পুরানো বই আর 'বই' বলে ঠিক চেনা যাচ্ছিলো না ।

বাড়ির ছাদে রোদ্দুর খাচ্ছে বেঁচে যাওয়া পুরানো কিছু দেব সাহিত্য কুটিরের পূজাবার্ষিকী... 
বেঁচে যাওয়া বইগুলিকে সযত্নে ছাদে মাদুর বিছিয়ে রোদ্দুর খাইয়ে খাইয়ে কিছুটা চাঙ্গা করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তেজবিহীন ডিসেম্বরের মেঘলা-রোদ্দুরে তাদের অভিমান ঘুচলো বলে মনে হয় না। সত্যি বলতে কি বই কেনা যতোটা সহজ, বই বাঁচিয়ে রাখা তার থেকে শতগুণ কঠিন, বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের যদি বইয়ের প্রতি তেমন মমতা না-গড়ে ওঠে !

~ ~ ~ ~ ~ 

নিজের দুঃখের কথা আর না-বাড়িয়ে এবার চলে আসি আমার আজকের এই পোস্টে। রাজকুমার মৈত্রের লেখা 'বগলামামা' হলেন হাসির গল্পগুলির মধ্যে আমার অন্যতম প্রিয় এক চরিত্র। দারুণ মজার, নির্মল হাস্যরসে ভরপুর এইসব গল্পগুলির মধ্যে কেন জানি মনে হয় বেশ কিছুটা সত্যি ঘটনারও ছোঁয়া রয়ে গেছে - টেনিদা বা ঘনাদা-র গল্পের মতো নিছক গুল-তামাশায় ভরা এগুলি নয়। 

বছর কয়েক আগে আমি বগলামামার বেশ কিছু (নয়টি) অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী এই ব্লগে আপলোড করেছিলাম, বাকী থেকে গিয়েছিলো আরও চারটি কাহিনী। সেগুলিকে আমি এইবার সাথে করে নিয়ে এসেছি। আমার জানা মতে আর কোনও বগলামামার কাহিনী দেব সাহিত্য কুটীরের পূজাবার্ষিকীতে প্রকাশিত হয়নি।  
'জিয়া ঘাবড়াকে' - চন্দনা পূজাবার্ষিকী (১৩৮৫)

আজকের পোস্টে রইলো ১৩৮৫ সালের মহালয়ায় দেব সাহিত্য কুটীরের "চন্দনা" পূজাবার্ষিকীতে প্রকাশিত হওয়া আমার অন্যতম পছন্দের বগলামামার অ্যাডভেঞ্চার "জিয়া ঘাবড়াকে" - যদিও বগলামামা এই গল্পের মুখ্য চরিত্র ঠিক নন, 'ছোটমামা' এখানে সর্বেসর্বা, কিন্তু কি যায় আসে তাতে? 

ছোটমামার বাড়ির মতোই জমজমাট একান্নবর্তী পরিবার ছিলো আমাদের - বিশাল দালান, বিশাল উঠান - জ্যাঠতুতো দাদা-দিদি, পিসি-মাসিরা সবাই মিলে সারা বাড়ি সরগরম করে রাখতেন। 
আমাদের বাড়ির বিশাল উঠান - (বছর পঁচিশেক আগেকার ছবি)
পাড়ার প্রতিটি লোক একে অপরকে চিনতেন, তাঁদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতেন কোন স্বার্থের কথা মাথায় না এনেই।  আমাদের সেই বিশাল উঠানে রোজ ভোরসকালে কোত্থেকে যেন এসে হাজির হতো এক ঝাঁক পায়রার দল, আর তাদেরকে খাবার দেওয়া হতো রুটির টুকরো আর চাল, যদিও ছোটমামার মতো আমাদেরকে 'হিন্দী গান' গেয়ে শোনাতে হতো না - তবে হিন্দী গান শোনা বা গাওয়া, দুটোকেই খারাপ কাজ হিসাবে দেখতেন বাড়ির ও পাড়ার অভিভাবকেরা... now I look back and realize what golden days I missed already... wish I have a time machine to go back !!

ছোটমামার এই গল্পের সাথে ফাউ হিসাবে রইলো তুষার চ্যাটার্জীর গা-ছমছম করা আধিভৌতিক ছবিতে গল্প "নরকের রাজা", যা পড়ে ছোটবেলায় ভয়ে রীতিমত শিহরিত হয়ে উঠতাম... 
দেব সাহিত্য কুটীরের 'চন্দনা' পূজাবার্ষিকী (১৩৮৫)
আশা করি দুটি গল্পই সবার খুব ভালো লাগবে। ভালো-মন্দ বেশ কিছু কমেন্টস পেলে হয়তো বগলামামার বাকি কাহিনীগুলিও ধীরে ধীরে ধরা দেবে এই ব্লগে।

Happy New Year (2016) - Happy Weekend !!


জিয়া ঘাবড়াকে ও 
নরকের রাজা 
(Size: 15.4 MB)







16 comments:

  1. Tomar post ekdom chokhe angul dewa dada r moto, koto kichu mone koriye dei, subho nabobarsho dada

    ReplyDelete
  2. আপনার বইগুলোর অবস্থা দেখে ঠিক করলাম পরেরবার বাড়ি গিয়ে আমার বইগুলোকেও বার করে দেখতে হবে। আর বাড়ি আসা সম্পর্কে যা বলেছেন তা একেবারে মনের কথা। শুধু বাড়ি যাওয়া নই , দেশের বাড়ি যে একটা আছে এই চিন্তায় রোজ আমার মতো অনেক প্রবাসীকে চলার রসদ যোগায়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এক্কেবারে ঠিক বলেছেন, দেশের টান থেকে যায় মনের খুব গভীরে, হয়তো আমাদের পরের জেনারেশানদের এই সমস্যা হবে না।

      Delete
  3. khub sundor ar mojar golpo . amar ache ei boiti .
    khub sundor somoy katiyecho ekhane ashakori

    comics reveu ar baj sayaerer opekxaai achi

    ReplyDelete
    Replies
    1. হে: হে: - সবে দেশ থেকে ফিরেছি, এখনও বাংলার রেশ রয়ে গেছে - ইংলিশে ফিরতে যে সময় লেগে যাবে !!

      Delete
    2. Ranjan Gangopadhyay, আপনার কাছে চন্দনা পুরাটা আছে? থাকলে প্লীজ অনলাইন এ দিন।


      Delete
  4. Puro Chandana ta pele sobtheke bhalo hoto 😊

    ReplyDelete
    Replies
    1. পুরো 'চন্দনা' আমার কাছে নেই - অর্ধেকটা উইপোকা খেয়ে হজম করে ফেলেছে - তবে এই বই আবার রি-প্রিন্ট হবেই, হয়তো সামনের পুজার সময়েই...

      Delete
    2. আমি পাগলের মত চন্দনা বইটা খুঁজছি। প্লীজ আমাকে হেল্প করুন পুরাটা পেতে।আমি অনেক ছোট থাকতে পড়েছিলাম।

      Delete
    3. ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই - তবে 'চন্দনা' বইটি থেকে আরো গুটিকতক গল্প আছে, সেগুলি পরে আপলোড করবো। চন্দনা বই অন্য ব্লগারদের কাছে আছে - আপনি http://indraindrajal.blogspot.com/ গিয়ে রিকোয়েস্ট জানিয়ে দেখতে পারেন।

      Delete
    4. This comment has been removed by the author.

      Delete
  5. anekdin por bagala mamar galpo peye darun laglo kuntalda. ei sobe namalam. ebar pora shuru korbo. aapnake shubho nanobarsho 2016.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks for visiting my blog and a very Happy New Year to You as well :)
      আরো খান দুয়েক বগলা মামার অ্যাডভেঞ্চার আছে - স্ক্যান করে আপলোড করবো।

      Delete
  6. দারুন পোস্ট ...ছোট বেলার কথা মনে পড়ে, সেটাই বেদনাদায়ক,কালের নিষ্ঠুরতা আমাদের গ্রাস করেছে ।

    ReplyDelete
  7. কুন্তল, আপনার সংগ্রহের বগলামামা পড়ে খুব লাগল। তবে আরও একটা জিনিস আমার ভাল লাগল সেটা হল আপনার দেশে ফেরার অনুভুতি ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা পড়ে। আপনাকে আগেও অনুরোধ করেছি যে কলম ধরুন। আপনার লেখার হাত দারুন। আপনি তো পাত্তাই দেন না ! :(

    ReplyDelete