'মা'-এর থেকে মধুর শব্দ এ জগতে আর কিছু হতে পারে না - এমন কি 'মা' শব্দ রিপিটেড হয়ে 'মা-মা' হয়ে গেলেও তার আকর্ষণ খুব একটা কিছু কমে না - অন্তত কৈশোরকাল অবধি তো নয়ই। মামা-বাড়ির আদর যে কতো মধুর হতে পারে তা যাদের মামা আছেন, তারা ভালো করেই জানেন। নার্সারি রাইমের সেই বিখ্যাত 'তাই তাই তাই, মামার বাড়ি যাই, মামার বাড়ি ভারী মজা, কিল-চড় নাই...' ছড়া আমরা প্রায় সবাই একসময় আউড়িয়েছি। কিন্তু কৈশোর পরবর্তী জীবনে সেই একই 'মামা' শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে নানান বিরক্তি ও ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যেমন ট্রেনে চলাকালীন 'মামা' শব্দের অর্থ হলো "লোভী টিকিট চেকার" - btw আমি এখনো পর্যন্ত কোনো নির্লোভী টিকিট চেকার দেখিনি। এই 'মামা' শব্দে চমকে গিয়ে কতো বার যে ট্রেন স্টেশনে থামার পর, ভীড় ঠেলে কামরার উল্টো দিকের দরজা দিয়ে লাফ মেরেছি তার ইয়ত্তা নেই। জ্যাম-প্যাকড ট্রেনের কামরায়, এক দিকের দরজা হতে অন্য দিকের দরজায় তাড়াতাড়ি করে পৌঁছানো যে কি কষ্টের এবং কি লাঞ্ছনার, তা যারা করে বা করেছে, তারাই একমাত্র জানে - বিশেষ করে সাউথের ট্রেনগুলোতে। 'এই ড্যাকরা ! চোখ নেই তোর ?' টাইপের খাট্টা-মিঠে ভৎসর্ণা থেকে 'দাদার যে দেখছি আজ ব-ড্ড তাড়া !' টাইপের রস-ঘন সম্বোধন যে কতোবার শুনতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। অন্যদিকে আমার পিতৃদেব আবার শীতকালে ঘন-কালো কোট-প্যান্ট পরে অফিসে যাওয়া-আসা করতেন। তাঁর সেই কালো কোটের কারণে তিনি যে কি চরম সুবিধা ভোগ করতেন তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। ট্রেন স্টেশনে থামা মাত্রই তাঁর সামনের অন্তত তিনটে কামরার দরজার ভীড় মুহুর্তের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যেতো। তিনি একটু গলা-খ্যাঁকারী দিয়ে, ধীরে সুস্থে উঠে, দরজার প্রায় সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সোনারপুর-টু-ঢাকুরিয়া যাওয়া-আসা করতেন। মাঝে মাঝে আমার মা মজা করে শোনাতেন: যেদিন পড়বে 'চেকার পেটানো' দলের হাতে, বুঝবে কালো কোটের মাহাত্ম্য কি ! ঈশ্বরকে অজস্র ধন্যবাদ, তাঁকে সেরকম কোনো দিনের মুখ দেখে যেতে হয় নি। আবার চাকুরী জগতে এই 'মামা' শব্দের অর্থ: লবি-থাকা, ওপর মহলে জানা-শোনা কোন চৌকস ব্যক্তি, বা স্বজনপোষণে বিশ্বাসী কোনো উচ্চপদস্থ ভদ্রলোক। ঠিক মতো জায়গায় 'মামা' থাকলে, বা বানাতে পারলে জীবনসংগ্রাম হয়ে যায় 'আ:হ' থেকে 'আ-আ-হা-আ' - অনেকটা লুজ-মোশানের মতই সাস্থ্যকর, সাবলীল ও আরামদায়ক।
বাংলা মজার বা হাসির গল্পের দুনিয়ায় অবশ্য 'দা'-এর তুলনায় 'মামা' চরিত্র অনেক কম। শরৎচন্দ্রের সফিস্টিকেটেড, অসম্ভব মজাদার 'মেজদা' চরিত্রের পর ঘনাদা-টেনিদা-বরদা-ব্রজদা-পিন্ডিদা-ননীদা-রা আমাদের কৈশোরের দিনগুলোকে হাসির রসে বুঁদ করে রেখেছিলো। অ্যাডভেঞ্চার-কাম-গোয়েন্দা গল্পে ফেলুদা তো নি:সন্দেহেই, এমন কি ঋজুদাও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তবে পিসে-জ্যাঠা-কাকা নিয়ে মজাদার চরিত্র আমার তেমন মনে পড়েনা। 'মামা' চরিত্রগুলোর মধ্যে রাজকুমার মৈত্রের 'বগলামামা' আমার অসম্ভব প্রিয় - এরপরেই থাকবে বিধায়ক ভট্টাচার্জের 'অমরেশ মামা' - তারপরে হয়তো সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের 'বড়মামা' আসবে।
এই ব্লগে আমি কিছু অমরেশের কীর্তি-কাহিনী পোস্ট করলাম। সবকটাই দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত হওয়া পূজাবার্ষিকীগুলোতে কোন না-কোন সময়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। নাটকের স্ক্রিপ্টের আকারে লেখা অমরেশের এই কাহিনীগুলো ছিলো বেশ মজার। সূক্ষ হাস্যরসে ভরা অমরেশ-দীপার মিঠে খুনসুটি, ভুবনের তোতলামি, অমরেশের সিরিয়াসনেসে ভরা রসবোধ, পাড়ার ফাংশানে হওয়া নাটকের জন্যে ছিলো ideal... স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবার আগে এইসব কাহিনীগুলো আরও একবার তুলে ধরার চেষ্টা করলাম - আশা করি সবারই কম-বেশী ভালো লাগবে এই গল্পগুলো।
১. শ্রীদূর্গার পলায়ন - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (8.9 MB)
২. বহ্বারম্ভে - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (7.1 MB)
৩. অমরেশের শেষ অবদান - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (6.4 MB)
৪. অমরেশের পরীচালনা - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (6.9 MB)
৫. ক্রিমিনাল অমরেশ - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (12 MB)
৬. গোখরোর মুখে অমরেশ - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (8.1 MB)
৭. অহিংস অমরেশ - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (4.9 MB)
৮. অমরেশ আর পারেনা - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (4.4 MB)
৯. বাংলা দেশে অমরেশ - ডাউনলোড লিংক: ক্লিক করুন এখানে (0.4 MB)
No comments:
Post a Comment