ছোটবেলার যে অজস্র সব জিনিষ আমি এখন মিস করে চলেছি তার মধ্যে অন্যতম হলো ভূতের ভয় আর ভূতের গল্প। সত্তর দশকে শহরতলীগুলোর বেশীরভাগ জায়গাতেই ইলেকট্রিসিটি ছিলো না। পরের দিকে ইলেকট্রিসিটি এলেও লোডশেডিংয়ের প্রাদূর্ভাব ছিলো যথেষ্ঠই। সন্ধ্যা হতে না-হতেই আমরা তাই মোমবাতি, হ্যারিকেন হাতের কাছে রেখে পড়াশুনা শুরু কোরতাম। কেরোসিন তেলের স্বল্পতার জন্যে বেশীরভাগ বাড়িতেই মোমবাতি-দেশলাই মজুদ করে রাখা হতো। নির্জন সন্ধ্যাবেলাগুলোতে হ্যারিকেনের স্বল্প আলোতে পড়তে বসে, উঠানের পাশে থাকা গাছগুলোর দিকে তাকালেই গা যেন কেমন ছম-ছম করে উঠতো - খালি মনে হতো কেউ যেন গাছের ছায়ার আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করে চলেছে। ভূতের ভয়ে বহুবারই মাঝরাতে একা একা বাথরুমে যাবার তাড়া উপেক্ষা করে, দাঁতে দাঁত চেপে জোর করে বিছানায় শুয়ে রাত কাবার করে দিয়েছি।
বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের রচিত সবকটি ভৌতিক গল্পই চিরকাল আমাদের মনে বিশেষ সমীহের সৃষ্টি করে এসেছে। ভবঘুরে বিভূতিভূষণ জীবনে যেখানে যেখানে যেতেন, সেখানকার প্রকৃতি এবং মানুষকে তাঁর সাহিত্যের মধ্যে অসীম মমতায় ধরে রাখতেন, ঠিক যেমন করে কোন সুদক্ষ চিত্রকর, ছবির মধ্যে তাঁর নিজস্ব ভাবনা ধরে রাখেন। তিনি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করতেন অলৌকিকে - তাই তিনি যেখানেই যেতেন, সংগ্রহ করে নিতেন সেখানকার ভৌতিক ও অলৌকিক ঘটনাগুলিকে। তিনি দৃড়বিশ্বাসী ছিলেন যে মানুষ একদিন আধুনিক বিজ্ঞানের কল্পনাতীত পরলোক-কেও ঠিক আবিষ্কার করে ফেলবে। আর সেই অচেনা জগতের রহস্যময় সংসারযাত্রার প্রমাণও আমরা একদিন না একদিন পাবো।
চেতনার গহন-গভীরে মানুষ চিরটাকালই গল্পখোর। অলৌকিক, অতিলৌকিক ঘটনার দিক আজ শেষ হয়ে যায় নি - কেবল অনেক সময় আমরা তাদের অলৌকিক বলে চিনে নিতে পারি না। ছোটবেলায় পড়া যে সমস্ত ভূতের গল্প আজও আমায় haunt করে বেড়ায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প" - এমনই ছিলো সে গল্পের বাঁধুনী যে পড়া শেষ হয়ে যাবার পরেও কেমন একটা ঝিম ধরা ভাবে মস্তিষ্ক আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এই গল্প আজও আমি রাতের বেলায় একা একা পড়বো কিনা সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে !!
বিভূতিভূষণ রচিত 'তারানাথ তান্ত্রিকের' দুটি গল্প শেয়ার করা হলো এখানে - আশা করি অন্যেরাও এটি পড়ে আমার মতোই ভয় পাবে !!
তারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্প ও আরও কয়েকটি ভূতের গল্প |
বিভূতিভূষণ মহাশয় তারানাথের দুটি গল্প লিখেই প্রয়াত হয়েছিলেন। তাঁর সেই অবিস্মরণীয় সৃষ্টির ধারা বহন করার ভার গিয়ে পড়েছিল তাঁরই সুযোগ্য পুত্র শ্রী তারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের উপর। তাঁর হাত ধরে তারানাথের গল্প আবার সজীব ও সক্রিয় হয়ে ওঠে - কিন্তু ভগ্ন স্বাস্থ্যের দরুণ 2010 সালে (July 18) তাঁরও অকালপ্রয়াণ ঘটে। শুরু থেকে ধরলে তারানাথের ধারাবাহিকতা প্রায় ছয় দশকের - কিন্তু গল্পের খাতিরেই তারানাথের বয়স বাড়েনি - এখনও সে মধ্য পঞ্চাশে, থাকে মট লেনেই - বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের কলকাতায়।
এখানে তুলে ধরা হলো তারাদাস বন্দোপাধ্যায় রচিত (১৩৯২) তারানাথের তান্ত্রিকের তৃতীয় ও শেষ গল্প।
2016-আপডেট: তারানাথ তান্ত্রিকের মূল বইটি জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে - সুতরাং নতুন করে সবকয়টি উপাখ্যানই পাওয়া যাবে খুব শীগগিরিই !!
[[পুনশ্চ: তারাদাস বন্দোপাধ্যায় রচিত 'তারানাথ তান্ত্রিকের' গল্পটি আপলোডের মূল কৃতিত্ব আমার নয় - সেটা তোলা রইলো প্রথম, অর্থাৎ অরিজিলান আপলোডার-এর জন্যে। বইটি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হলো কেবলমাত্র 'তারানাথ' সিরিজের 'সম্পূর্ণতার' জন্যেই...]]
তারানাথ তান্ত্রিক
- তারাদাস বন্দোপাধ্যায়
*** তারাদাস বন্দোপাধ্যায় রচিত অতিলৌকিক গল্প, 'অলাতচক্র' আপলোড করা হলো এই লিঙ্কে
durdanto hochchhe kaajkammo...taranath tantriker galpo mot koti achhe ?! net e duti paoa jaay....jai hok boi er cheye adi/
ReplyDeleteprothom sanskaran porbar mojai aalada...thx a lot.
darun quality etar dada.........hya Taranath Tantrik aamar o darun priyo.........eta pora chhilo...........aro besh kichhu golpo (Bibhuti Bhshan er por onar chheleo ei choritro ta niye golpo lekhen besh koyekti) amar pora! durdanto lage! apnar prochesthar jonyo onek dhonyobad
ReplyDeleteতারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্প ও আরও কয়েকটি ভূতের গল্প এখানে আপলোড করা হলো
Deleteতারানাথ তান্ত্রিক কে নিয়ে প্রথম গল্প লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দুটি গল্প লেখার পরই তিনি দেহত্যাগ করায় তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ দায়িত্তে তারানাথ কে নিয়ে লেখা শুরু করেন। ২০০৩-এর বইমেলায় মিত্র-ঘোষ থেকে তাঁর একটা বই বার হয়েছিলো, নাম "অলাতচক্র" - সেটি এখনো পড়া হয়ে ওঠেনি।
ReplyDeleteদারুন কাজ করে চলেছেন আপনারা। 'অলাতচক্র' বইটার নাম শুনছি বহুবছর ধরে কিন্তু খুঁজে পাইনি। আর তারাদাস বাবুর তারানাথ তান্ত্রিক বইটার একটি সফটকপি নেটে পাই (এখানেও ওটা দিয়েছেন), তাতে আবার দুটো পৃষ্ঠা নেই। ফলত, তারানাথ তান্ত্রিকের সব উপাখ্যান একসাথে পাওয়ার সৌভাগ্য, আমার এ জীবনে আর হয়ত হবে না।
ReplyDeleteতারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের লেখা 'অলাতচক্র' উপন্যাসটি সবেমাত্র পড়া শুরু করেছি - বেশ ভালো লাগছে - পড়া শেষ হলে ওটা ব্লগে দেওয়ার ইচ্ছা আছে - সঙ্গে থাকুন :)
Deleteতারানাথ তান্ত্রিকের বইটি জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে - সুতরাং নতুন করে সবকয়টি উপাখ্যানই পাওয়া যাবে শীগগিরিই !!
Delete