Sunday, November 30, 2014

অস্তাচলের পথে - সব্যসাচী

ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় মোট দুটো পাবলিক লাইব্রেরী ছিলো। বাবা একটাতে মেম্বার হয়েছিলেন, আর আরেকটিতে মেম্বার ছিলেন আমার ছোটদা। বাবা ছিলেন দারুণ কর্মব্যস্ত মানুষ, তাই  খুব একটা লাইব্রেরীতে যাবার সময় করে উঠতে পারতেন না, তাই ছোটদা বা ছোটদি, আর পরবর্তী কালে আমি, সেই দুই লাইব্রেরী থেকে বই আনাআনি করতাম। প্রতি কার্ডে মাত্র দুটি করে বই ইস্যু করা হতো, এক সপ্তাহের মধ্যে পড়ে ফেরৎ দিতে হতো, না'হলেই ফাইন দিতে হতো। সেইসব বই যে শুধু আমরাই পড়তাম তা নয় - ছোটদা আর ছোটদির নানান বন্ধুরা, পরবর্তীকালে আমার বন্ধুরা, আমার ইংলিশের টিচার, এবং আরো অনেকেই। তাই মাঝে মধ্যেই বই ফেরৎ দিতে দিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে ফাইন হয়ে যেতো, আর আমাদেরকেই সেই ফাইনের ভার বহন করতে হতো। তবু আমরা অন্যদেরকে বই পড়তে দিতাম - কেন যে দিতাম তা ঠিক এখনও আমি বুঝে উঠতে পারিনি - হয়তো বই-পড়ার আনন্দ সবার মধ্যে ভাগ করে নেবার সুপ্ত ইচ্ছাটা আমাদের বাড়ির প্রত্যকের মধ্যেই লুকিয়ে ছিলো।          


প্রকাশক: দেব সাহিত্য কুটীর 
ক্লাস ফাইভ থেকে আমি অন্য এক স্কুলে ভর্তি হই - সিক্স কি সেভেনে যখন পড়ি তখন দেখলাম আমার ক্লাসের ছোটখাটো চেহারার, শান্ত গোবেচারা টাইপের এক ক্লাসমেটকে সবাই খুব সমীহ করে চলছে। ব্যাপারখানা কিছুদিনের মধ্যেই জানা গেলো - তার কাছে প্রচুর গল্পের বই ছিলো, আর সে স্কুলে প্রতিদিনই কয়েকটি বই সঙ্গে করে নিয়ে আসতো। মূলত: স্বপনকুমারের কালনাগিনী/বাজপাখি সিরিজ, আর দেব সাহিত্য কুটিরের  ছোট ছোট গোয়েন্দা আর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর বইগুলি।  সেই বইগুলি সে ক্লাস চলাকালীন পড়ার বইয়ের মধ্যে ভাঁজ করে রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে চলতো। তার স্নেহভাজনেরাও ভাগাভাগি করে এই সব গল্পবই পড়ার দূর্লভ সৌভাগ্য লাভ করতো

ফলত: কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাসের মধ্যে তিনটে গ্রুপ হয়ে গেলো। মুষ্টিমেয় কিছু যারা ক্লাস চলাকালীন লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পবই পড়ে - 'হা-ভাতে' গোছের আমরা অর্থাৎ যারা পড়তে চেয়েও পড়তে পাইনা - আর বাদবাকি ত্যাঁদোড় টাইপের কিছু, যারা টিচার সহ এই দুটো গ্রুপের কাউকেই তেমন কেয়ার করে চলেনা। তো একদিন সেই 'অভুক্ত', দ্বিতীয়-গ্রুপের কেউ একজন স্যারের কাছে বেনামী চিঠিতে জানিয়ে দিলো এই গুপ্ত বই সরবরাহের ব্যাপারখানা। ফলে যা হবার তাই হলো, একদিন ক্লাস চলাকালীন আমাদের ভূগোল স্যার একেবারে হাতে-নাতে ধরে ফেললেন 'পালের গোদা' আমার সেই ক্লাসমেটকে। সে তখন নিবিষ্ট চিত্তে একখানা গল্পের বই পড়ে চলেছিলো। স্যার বোধহয় এসেছিলেন প্ল্যান করেই, আর যায় কোথা!! কান ধরে তাকে ক্লাস থেকে হিড়-হিড় করে টেনে নিয়ে যাবার সময় দেখা গেল ভূগোল স্যারের হাতে ধরা রয়েছে দেব সাহিত্য কুটিরের একখানা গোয়েন্দা কাহিনীর বই, নাম 'অস্তাচলের পথে'।     

বইখানা স্যার টিচার্স রুমের এক ড্রয়ারে তালাবন্দী করে রেখে দিলেন। বিকট কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েও সে শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেলো না। অজস্র কানমলা, চড়-চাপড়ের সাথে সাথে তার বই বাজেয়াপ্ত তো হযে গেলোই, উল্টে তাকে ক্লাসের একদম প্রথম সারির বেঞ্চে বসার আদেশ দেওয়া হলো। যদিও আমি সেসময় তার স্নেহভাজন-গ্রুপে থাকার সৌভাগ্য লাভ করে উঠতে পারিনি, তবুও এক অদ্ভুত কারণে তার এই শাস্তির বহর দেখে আমার বেশ মন খারাপ হয়ে গেলো। বিশেষ করে তার সেই বই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবার ব্যাপারখানা আমাকে বেশ ব্যথিত করে তুলেছিলো। পরবর্তী কালে অবশ্য তার সাথে আমার ধীরে ধীরে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো, আর প্রচুর গল্পের বইও পড়েছিলাম তার সৌজন্যে।  

এই ব্লগে আমি সেই হারানো দিনের ডিটেকটিভ উপন্যাসটি পোস্ট করলাম। এটি অবশ্য পরবর্তীকালে দেব সাহিত্য কুটীর থেকে নতুন কলবরে প্রকাশিত প্রহেলিকা সিরিজের দ্বিতীয় সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই কাহিনীটি লিখে ছিলেন 'সব্যসাচী', অর্থাৎ আমাদের সবারই প্রিয়, শ্রদ্ধেয় শ্রী সুধীন্দ্রনাথ রাহা মহাশয়।  

অস্তাচলের পথে
(30.4 MB)








Saturday, November 22, 2014

কালজয়ী বাংলা গল্পের দল - 'সিকেপিকেটিকে' 'পেন্টাগন'

'বেস্ট ফ্রেন্ড' বানানো যায় না, তা আপনা-আপনিই হয়ে যায়, কথাটা যেমন সত্যি, তেমনি আবার এটাও সত্যি যে একটা বয়সের পর, বিশেষ করে কিশোর জীবন অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পর, আর নতুন করে 'প্রাণের বন্ধু' খুঁজে পাওয়া যায় না, বা আর কারোর সত্যিকারের বন্ধু হতে পারা যায় না। মানুষের জীবন নদীর মতো - একবার চলতে শুরু করলে আর কখনো ফিরে আসে না।  বয়সের হাত ধরে আমাদের নানান ধরনের মানুষের সাথে আলাপ-পরিচিতি বেড়েই চলে, কিন্তু তাদের কেউই আর ঠিক 'বন্ধু' হয়ে ওঠে না।  তাই উত্তম-সুচিত্রার 'হাত বাড়ালেই বন্ধু' সিনেমাটার বক্তব্যটি কিন্তু ডাহা মিথ্যে!  

স্কুল আর সেই সময়্কার বন্ধুদের নিয়ে অসাধারণ সোনালি দিনগুলোর কথা যদি সামান্যও ভাবতে বসি, তাহলে ছেলেবেলার আর বাদবাকি যাবতীয় সুখের স্মৃতিরা ফিকে হয়ে যায়। আমাকে যদি কেউ কোনদিন একটা টাইম-মেশিন দেয়, তা'হলে আমি ঠিক চলে যাবো আমার সেই ফেলে আসা শৈশবে, যেখানে এখনো সেই আইসক্রীমওয়ালাটা তার সাইকেলের ক্যারিয়ারে আইসক্রীম-ভর্তি কাঠের, চারকোনা বাক্সটা বেঁধে আমাদের ছুটে আসার জন্যে অপেক্ষা করে চলেছে...

তবে শৈশব আর কৈশোরকে  ছুঁতে পারার মধ্যেও এক অন্য ধরনের সুখ আছে। সময়ের যাঁতাকলে পড়ে আমরা যতোই দূরে সরে যাই ছোটবেলা থেকে, ততোই যেন মন আরও বেশি করে ফিরে পেতে চায় তাকে। 



স্মৃতিপীড়ায় আনন্দ আছে যথেষ্ঠই - তাই ঘুমে-জাগরণে আমার সব ভ্রমণ কৈশোর-অভিমুখে। কিশোরবয়সে পড়া কিছু কিছু গল্প আমি আজও ভুলে উঠতে পারিনি। আজও নতুন করে পড়তে বসলে সেই কিশোর বয়সের রোমাঞ্চের আঁচ যেন অনেকটাই অনুভব করি। এইসব গল্প পড়তে পড়তে কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে অনায়াসেই উড়ে যাই অন্য কোনো এক ভুবনে।

এইসব গল্পগুলোতে কোথাও অনর্থক কিশোরী চরিত্র এনে সুড়সুড়ি দেওয়া নেই - নেই ঘুঁষোঘুঁষি বা বন্দুক-পিস্তলের অহেতুক গর্জন। বরং আছে মানুষের চিরকালীন, শাশ্বত জীবনসত্য, যা পড়তে পড়তে পাঠকেরা অনেকেই ফিরে পাবেন তাঁদের হারানো ছেলেবেলা। 

এই ব্লগে আমি সেই হারানো দিনের 'কিশোর বন্ধুত্ব' নিয়ে দুটি অসাধারণ গল্প পোস্ট করলাম। প্রথমটি, অর্থাৎ 'সিকেপিকেটিকে'-র লেখক হলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, আর পরেরটি, অর্থাৎ 'পেন্টাগন'-এর লেখক হলেন আমাদের সবারই অতি প্রিয় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়অসম্ভব ভালোলাগায় ভরপুর, মর্মস্পর্শী এই দুটি গল্প সবারই ভালো লাগবে।  

সিকেপিকেটিকে ও 
পেন্টাগন 










Thursday, November 20, 2014

Iznogoud – The Grand Vizier Iznogoud

“I want to be the Caliph instead of the Caliph” - We are back again with the denizens of old Baghdad. This time we have a genie from a magic pair of slippers, a fractious neighboring sultan, a pair of dumb stand-in strong-arm men, a Mongol horde complete with Yurts and yogurts,  a Caliph look-a-like, and a fabled island of the giants. And each is used, by devious, deceitful, and frankly doomed Iznogoud, in his Caliph toppling attempts. And every time it goes wonderfully, ridiculously, disastrously wrong for Iznogoud.

Iznogoud Vol. 9  (Nov 2012)

Plot:
Iznogoud is still trying to get rid of Caliph Haroun al Placid so he can take his place. He’s even kept a journal of his previous failed attempts. But, never discouraged, he will once again come up with new ways to entertain us through his failures: genies, kidnappings, lookalikes, diplomatic incidents... and even the Mongol horde! When it comes to becoming Caliph instead of the Caliph, all’s fair to Grand Vizier Iznogoud!

René Goscinny (1926-1977)

René Goscinny (French: [ʁəne ɡosini]; 14 August 1926 – 5 November 1977) was a French comics editor and writer, who is best known internationally for the comic book Astérix, which he created with illustrator Albert Uderzo, and for his work on the comic series Lucky Luke with Morris (considered the series' golden age) and Iznogoud with Jean Tabary.



With Goscinny’s delightful and devilish sense of humor, perfectly blended with Tabary’s beautiful art, everyone will be amazed with the off-hand bits of clever comedy. Iznogoud is classic funny. But it’s classic Goscinny. The two are practically inseparable.

Iznogoud Volume 9 
(50 Pages - 52.1 MB) 








Wednesday, November 19, 2014

লালচুল - মনোজ বসু

ভরা বর্ষার রাতে বাড়ির বড়োদের মুখে ভূতের গল্প শুনে ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপার মতো অনুভূতি এ যুগের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কখনো হয়েছে, বা আদৌ কখনো হবে কি না, সে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে।  তবে আমাদের ছোটবেলায় এরকম ঘটনা অজস্রবার ঘটেছিলো। ভূতের ভয়ে আমরা, অর্থাৎ পিঠোপিঠি ভাই-বোনেরা, সবাই মিলে এক খাটে জড়াজড়ি করে শুয়ে কতোবার যে এক-ঘুমে রাত কাটিয়ে দিয়েছি তার ঠিক নেই ! সেই ভয় পাওয়াতে এক অদ্ভুত আনন্দ লুকিয়ে থাকতো। আবার, পরের দিন সকালে উঠে আগের রাতের ভয় পাওয়া নিয়ে ভেবে নিজেদের মধ্যেই সে কি হাসাহাসি !! 



বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কথা-সাহিত্যিক  মনোজ বসুর জন্ম হয়ে ছিলো ১৯০১ সালে যশোর জেলার ডোঙ্গাঘাটা গ্রামে। মনোজ বসুর শৈশবের বোধোদয় ঘটে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন উত্তরকালে। তাঁর পিতা,রামলাল বসু ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ। 
মনোজ বসু (১৯০১ - ১৯৮৭)
পিতার স্বাধীনচেতা মানসিকতা পুত্রের মধ্যেও সঞ্চারিত হয় ছাত্রজীবনে। রামলাল বসু কবিতা লিখতেন। পুরুষানুক্রমে লেখালেখির বীজ মনোজ বসুর রক্তের মধ্যে নিহিত ছিলো। পিতার মতোই কবিতা দিয়ে মনোজ বসুর সাহিত্যচর্চার যাত্রা শুরু হয়েছিলো, পরে তাঁর লেখনী থেকে নির্মিত হয়েছিলো অসংখ্য অসাধারণ গল্প এবং আরো পরে উপন্যাস। 

মাত্র আট বছর বয়সে পিতার মৃত্যু বালক মনোজ বসুর জীবনকে ভয়ংকর অবস্থায় ফেলে দেয়। দারিদ্রের চরম যন্ত্রণা তাঁর ছাত্রজীবনকে টালমাটাল করে তোলে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তবে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কলকাতা জীবনের পরবর্তী কালের সাফল্য ও প্রতিষ্ঠা কিন্তু মনোজ বসুর গ্রামবাংলার স্মৃতিকে ভোলাতে পারেনি। তিনি অসাধারণ মুগ্ধতায় ও সহজ সরল ভাষায় গ্রামবাংলার নানা ছবি অঙ্কন করে গেছেন তাঁর লেখা গল্প ও উপন্যাস গুলিতে। 



কিছু কিছু ভূতের গল্প আছে যা পড়ে ভয় পাবার সাথে সাথে কিছুটা দু:খ বা মায়াও জাগে মনে। তাই গল্প শেষ হয়ে যাবার পরেও এক অদ্ভুত আবেশে মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। বাংলা সাহিত্যের কথা-সাহিত্যিক মনোজ বসুর "লালচুল" গল্পটি হলো সেরকমই এক মর্মস্পর্শী ভূতের গল্প। একসময় এই গল্পটি পড়তে আমার খুবই ভালো লাগতো। সেই গল্পটি আজ আপলোড করা হলো।  

লাল চুল









Monday, November 17, 2014

Diecast Cars & Planes from Disney Movies

আজকের এই পোস্টের সঙ্গে কোনো গল্পের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই, বরং যোগ আছে সিনেমার - অ্যামেরিকান Disney Movie 'Cars' আর 'Planes'-এর। 

ছোটবেলায় অনেককেই বলতে শুনি যে সে বড়ো হয়ে 'এই' হতে চায় বা 'সেই' হতে চায় - কিন্তু অস্বচ্ছলতার জন্যেই হোক, বা অন্য যে কারণেই হোক, আমার ছোটবেলায় কিন্তু কেউ আমাকে কখনো জিজ্ঞাসা করেনি যে আমি বড়ো হয়ে কি হতে চাই। এখন অবশ্য চোখ বুজে ভাবলে মনে হয় যে আমি বোধহয় সেই সময়ে 'ড্রাইভার' হতেই চেয়েছিলাম। তবে স্পেসিফিক কোনো গাড়ির  নয় - যে কোন বড়সড় কোনো কিছুর - যেমন  ট্রেন, বাস, ট্রাক, হেলিকপ্টার বা নিদেনপক্ষে স্কুলভ্যানের। সে'সময়ে ঝুলনের সময়ে আমাদের পাড়ার দোকানগুলোতে প্লাস্টিকের তৈরী, সস্তার লাল-নীল ছোটো ছোটো গাড়ি বিক্রি হতো। বেশিরভাগই ছিলো লরী বা বাস টাইপের মামুলি গাড়ি - চাকাগুলো হতো খুব পাতলা আর পলকা, ভালো করে ঘুরতোও না। সেই গাড়ি গোটা পাঁচ-ছয়টা আমাকে কিনে দেওয়া হয়েছিলো - অবশ্য একসাথে নয় over the couple of years ! সেই গাড়িগুলোকে আমি যক্ষের ধনের মতো আগলে আগলে রাখতাম।  সেইসব গাড়ি নিয়ে খেলতে খেলতে আমি  ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম। একবার কলকাতায় কি একটা কারণে গিয়ে এক লাক্সারী মনোহারী দোকানে, লাল রঙের এক দোতলা বাস দেখে বাবার কাছে খুব বায়না ধরেছিলাম যে সেই বাসটা কিনে দেবার জন্যে। বাবা ছিলেন খুবই ধৈর্য্যশীল - আমাকে নানান কথা বলে ভুলিয়ে-ভালিয়ে, "দেবো, দেবো - সামনের মাসে ঠিক কিনে দেবো..." বলে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলেন। স্কুল শেষে আমি কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম, তখনও বাবা সেই 'দোতলা বাস' কিনে দেবার সময় করে আর উঠতে পারলেন না। তখন অবশ্য গাড়ি নিয়ে খেলার ইচ্ছা অনেক আগেই আমি হারিয়ে ফেলেছি। তবে সেই বাস কিনে না-দেওয়া নিয়ে, সুযোগ পেলেই আমি বাবাকে কথা শোনাতে ছাড়িনি। 

এদেশে এসে আমার ছেলের পাল্লায় পরে আমি অ্যানিমেশন/কার্টুন সিনেমা দেখা শুরু করে বুঝতে পারলাম যে ইচ্ছা থাকলে মানুষ একটা সামান্য অ্যানিমেশন সিনেমাকেও কি অসাধারণ শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে - বিশেষ করে ডিসনি-র মুভিগুলো। ২০০৬ সালে Disney/Pixar Movie থেকে 'Cars' বলে একটা ছোটদের অ্যানিমেশন মুভি বার হয়েছিলো, যেটা আমি নিজে থেকে কখনই দেখার আগ্রহ বোধ করিনি। ভগবান ওপর থেকে দেখে বোধহয় মুচকি হেসেছিলেন। তো, ছেলের জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হবার পর সব ছেড়েছুড়ে আমাকে সেই Cars-ই দিনে গড়পরতা দু-তিনবার করে দেখতে হলো। দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই কখন খেয়াল করলাম যে সেই মুভি আমার বেশ ভালো লাগতে শুরু করে দিয়েছে। এরপর শুরু হয়ে গেলো দু-একটা করে Cars-এর ক্যারেক্টারদের আদলে বানানো Diecast  গাড়ি কেনা - সেগুলোও বার হতো Disney/Pixar বা Mattel থেকে - সবই অবশ্য চায়নাতে বানানো। কিনতে কিনতে একসময় দেখলাম যে খেলনা-গাড়ি কেনাটা, বই-কেনার নেশার থেকে কম কিছু নয়। Amazon, eBay, Target, ToysRus, Walmart, লোকাল খেলনার দোকানগুলো, আমার নিয়মিত গন্তব্যস্থল হয়ে দাঁড়ালো। ছেলের দোহাই দিয়ে ক্রমাগত গাড়ি কিনতে কিনতে আমার খেলনা গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চললো। শেষ-মেষ আমাকে একটা বড়সড় আলমারীই কিনতে হলো IKEA থেকে, স্রেফ খেলনা গাড়ি রাখবার জন্যে। ছোটবেলার সেই অবরুদ্ধ গাড়ী কেনার আকাঙ্খা ঈশ্বর যেন আমার এই বুড়ো বয়সে ছেলের হাত ধরে আবার নতুন করে ফিরিয়ে দিলেন। 

~ ~ ~ ~ ~
এই পোস্টে আমি আমার সেই 'গাড়ি আর প্লেন কালেকশান' থেকে বেশ কিছু গাড়ি/প্লেনের ফটো আপলোড করলাম। কিন্তু অর্ধেক গাড়ি/প্লেন-র ফটো তোলার পরই দেখলাম কোমরে অদ্ভুত চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে - অগত্যা 'যা হয়েছে যথেষ্ঠ' বলে সেখানেই ক্ষ্যামা দিয়ে দিলাম।  আশা করি আমার মতো আরো অনেক গাড়ি-পাগলদেরই এই ছবিগুলো দেখে ভালো লাগবে।  

এইসব গাড়ি বা প্লেনগুলির প্রতিটিই মেটালের তৈরী, অর্থাৎ যাকে বলে 'Diecast Model' (3.25" inches x 1.5 inches) - প্রায় সবকটিই (~98%) হলো 1:55 স্কেলের, বাকি কয়েকটি 1:48 স্কেলের। প্রতিটিরই dashboard-এ একজোড়া করে চোখ আছে - কিছু কিছুর চোখদুটো আবার 'নড়াচড়া' (move) করে (Lenticular Eyes !) - কয়েকটি আবার (স্যুইচ টিপলে) কথাও বলতে পারে। কিছু কিছু মডেলের (mainly racing cars) গাড়ির চাকা 'সিন্থেটিক রাবার'-এর তৈরী, আর সেগুলোর দাম বেশ, বেশ চড়া ($18-$45) - প্রতিটি Car বা Plane-রই একটি করে নিজস্ব নাম আছে এবং প্রত্যেকেরই সিনেমাতে কম-বেশী ভূমিকা আছে। Disney/Mattel ইচ্ছা করেই তাদের ~10% গাড়ি বা প্লেন-র প্রোডাকশন খুব অল্প করে release করে, যার ফলে সেগুলো দোকানে সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না - কেবলমাত্র eBay বা Amazon-এ কিছু মুষ্টিমেয় seller প্রচন্ড চড়া দামে বিক্রি করে !! সেইগুলো কেনার জন্যে collector-দের মধ্যে ভালো কম্পিটিশন দেখা যায়। এরকম মডেল আমার মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি আছে। 

এখানে আপলোড করা ছবিতে আমি এই সবকয়টি গাড়ি বা প্লেনের নাম আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করলাম না - ধৈর্য্যে ঠিক কুলিয়ে উঠলো না !! আর, তাছাড়া গুগল সার্চ করলেই এদের নাম-ধাম, সবই মূহুর্তের মধ্যে জানা যাবে। 

DISNEY CARS/CARS2 MOVIE CHARACTERS






































DISNEY PLANES MOVIE CHARACTERS










DISNEY FIRE & RESCUE CHARACTERS