"হলদে সবুজ ওরাং ওটাং, ইট পাটকেল চিটপটাং ,
গন্ধ গোকুল হিজিবিজি, নো অ্যাডমিশান ভেরি বিজি
মুশকিল আসান উড়ে মালি, ধর্মতলায় কর্মখালি..."
"আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর..." - যে আনন্দ উপভোগ করেছি ভোরের শিশিরবিন্দু ঠোঁঠে মেখে, বিয়েবাড়ির খাবার সেরে রাতদুপুরে জ্যোৎস্নাধোয়া উন্মুক্ত প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে বাবার কাঁধে চেপে বাড়ি ফিরতে, মেলায় গিয়ে শোনা বাউলের দোতারার টান আর সহজিয়া সুরের বাঁধনে বিভোর হয়ে যেতে, ভরা বর্ষার চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে কলাগাছের ভেলায় চড়ে মাঝপুকুরে তাল, সাঁপলা তুলে আনতে - আরও যেসব অজস্র রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে কেটেছিলো আমার...আমাদের ছোটবেলা, তাকে কি কখনো লেখার মধ্যে বা ফটোর মধ্যে ধরে রাখা যায়?
ছেলেবেলা নিয়ে লেখা সহজ কথা নয় - স্মৃতি হাঁতড়ে হাঁতড়ে শৈশবকে ফিরিয়ে আনতে হয়। কিন্তু একবার কোনো একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেলে, চেন রি-অ্যাকশনের মতোই একের পর এক স্মৃতিরা এসে ভীড় করতে থাকে। কিছু কিছু এমন জিনিষ আছে, যা সলতেতে আগুন দেবার মতো করে সেই "স্মৃতিগেট"টাকে হুশশ করে খুলে দেয়। এমনই সেই বস্তু হলো সুকুমার রায়ের লেখা ছোটদের গল্পবইটি...
প্রকাশক: দেজ পাবলিশার্স (প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারী 2000) |
দেশের বাড়িতে ছিলো এই বইটারই আদি সংস্করণ, লাল রংয়ের, বিড়ালের ছবি আঁকা, লম্বা-চওড়ায় অন্যান্য বইয়ের থেকে বেশ বড়ো, বেখাপ্পা সাইজের "সমগ্র শিশু সাহিত্য" - ছোটবেলায় যার থেকে গল্পগুলো পড়ে পড়ে প্রায় মুখস্থর পর্যায়ে এনে ফেলেছিলাম। সদ্য সমাপ্ত দুর্গাপুজায় ঠাকুর দেখতে গিয়ে, পুজা-ক্যাম্পাসের স্টলগুলিতে উঁকি মেরে মেরে দেখছিলাম। বেশিরভাগই আমিষ খাবারের স্টল, নয়তো শাড়ি-সালোয়ার-জুয়েলারির - আর ভীড়-ভাট্টাও সেগুলোতে মন্দ নয়। টপ-টু-বটম প্রসাধনে ভয়ানক-সজ্জিত মানবীদের দল সেগুলোতে ফিরফির করে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। এই বাজারে সবচেয়ে করুণ মুখ করে চেয়ে আছে বইয়ের স্টলটি, হাতে-গোণা একটিই। দু'একজন ঘুরছিলো বটে সেখানে, কিন্তু তাদেরকে দেখে ঠিক ক্রেতা বলে মনে হলো না। "প্রচেত গুপ্ত"-র লেখা গল্প সংকলনটির দাম চাইলো তেত্রিশ ডলার, যেটা কিনা যেকোন বাংলাদেশীদের ব্লগ থেকে অহরহ ফ্রীতে ডাউনলোড করা যাচ্ছে !! একটু ঝাঁকুনি খেয়ে, নানান ভাবনা-চিন্তা করে শেষমেষ কিনে ফেললাম এই "সুকুমার সমগ্র"টি। বেটার-হাফ কে দিয়ে দরাদরি করিয়ে দু-ডলার কমিয়ে, মাত্র পনেরো (!$!) ডলার দিয়ে, বেজায় লাভ করেছি এমন হাসি-হাসি মুখ করে কিনে, সঙ্গে নিয়ে ফিরলাম কৈশোরের অমূল্যধন সেই বইটিকে। পুজাপ্রনামের আনুষ্ঠিকতা সেরে ঠাকুরের স্টেজের সামনে থাকা চেয়ারগুলির একটিকে দখল করে, কেৎরে বসে শুরু করে দিলাম পড়া, "পাগলা দাশুর" গল্পগুলো। মুহুর্তক্ষণেকের মধ্যেই মিলিয়ে গেল আশেপাশে জনতার উচ্ছাসিত কলরব, স্টিরিও বক্সের নকল-ঢাকের দম-দম্মাদম তান্ডব রব - পড়ে রইলাম শুধু আমি, ও আমার ছোটবেলা !! ফিরে গেলাম সেই হারানো ছোটবেলায়... যেখানে খাকি রঙের মোটা কাপড়ের স্কুলব্যাগ পিঠে বয়ে নিয়ে, রাস্তার ধার ধরে টিকটিক করে হেঁটে চলেছি আমি, বন্ধুদের সাথে সাথে...
অফুরন্ত মজায় মজে ছিলাম, আর মজেও থাকব আমৃত্যুকাল অবধি। ব্যাকরণ না-মানার লেখক সুকুমার, কথায় কথায় মজার স্রষ্টা 'মজারু' সুকুমার কোনদিনও পুরনো হবেন না তাঁর সেই অক্ষয় অব্যয় অনবদ্য মন্ত্রটির মতো:
"মুশকিল আসান উড়ে মালি, ধর্মতলায় কর্মখালি
চিনেবাদাম সর্দিকাশি, ব্লটিংপেপার বাঘের মাসি "
এমন অর্থহীন সার্থক রচনা একমাত্র সুকুমারের পক্ষেই সম্ভব ! পড়ুন এখানে সেই সুকুমার রায়ের লেখা সেই অফুরন্ত মজার কিছু গল্প।
সুকুমার রায়ের গল্প (19 MB) |
thanks for uploading ...........
ReplyDeleteporertir opekhai roilam .........
bijoyar priti o suvecha neben ........
dipabolir agam suvecha roilo ...