বীরবল, গোপাল ভাঁড়, আর মোল্লা নাসিরুদ্দিন - এই তিনজনই ছিলেন মোটামুটি সমমাত্রার বুদ্ধিমান, চতুর ও হাস্যরসে ভরপুর ব্যক্তিত্ব। কিন্তু এদের মধ্যে বীরবলের পদমর্যাদা ছিলো বেশ উঁচুমাত্রায় বাঁধা, কারণ তিনি ছিলেন জগৎবিখ্যাত সম্রাট আকবরের রাজসভার নবরত্নের অন্যতম প্রধান রত্ন, ও সম্রাটের সবচেয়ে প্রিয় মন্ত্রী। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে ইতিহাসের পাঠ্যবই, 'স্বদেশকথা'-তে বীরবলের কথা জেনেছিলাম, যদিও তার অনেক আগে থেকেই অমর চিত্রকথা-র সৌজন্যে বীরবলের অনেক গল্পই পড়া হয়ে গেছে।
সম্রাটের আকবরের সাথে বীরবলের প্রথম পরিচয় যে কি করে ঘটেছিলো, তা নিয়ে খুব বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায় না। যে'কয়টি কাহিনী শোনা যায় তার মধ্যে সব থেকে পপুলার কাহিনীটি হলো এই রকম: সম্রাট আকবর শিকারে যেতে খুবই ভালবাসতেন। একবার শিকারযাত্রায় বার হয়ে সম্রাট ও তাঁর সভাসদেরা কোনোভাবে ফেরার রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘন্টা ধরে নানান পথে ঘুরে ঘুরেও তাঁরা রাজধানীতে ফেরার রাস্তা খুঁজে বার করতে পারলেন না। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে, অবসন্ন শরীরে হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে তাঁরা এক তিন-মাথা রাস্তার সংযোগস্থলে এসে হাজির হলেন। কিন্তু কোন রাস্তা ধরে এগুলে যে রাজধানীতে, অর্থাৎ আগ্রায় পৌঁছানো যাবে তা কেউই স্থির করতে পারলেন না। এই সময় এক যুবককে দেখা গেলো সেই তিন রাস্তার এক রাস্তা ধরে তাঁদের দিকে আসতে। সম্রাট তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে সেই রাস্তা তিনটির মধ্যে কোন রাস্তাটি আগ্রায় গেছে। উত্তরে সেই যুবক একটু হেসে বললেন, "কোনোটাই নয়"। সঙ্গে থাকা সভাসদেরা সবাই যুবকের সেই উত্তরে অবাক এবং শঙ্কিত হয়ে উঠলেন, কারণ সম্রাটের মাথায় একবার রাগ চড়ে গেলে, মৃত্যুদন্ড অবশ্যম্ভাবী। সম্রাট কোনরকমে তাঁর মেজাজ ঠান্ডা রেখে যুবকের সেই উত্তরের কারণটা কি তা জানতে চাইলেন। জবাবে সেই যুবক বললেন যে, কোনো রাস্তাই কোথাও যায় না, যায় শুধু পথিকেরা - তাই নয় কি? - এমন সহজ, সরল ব্যাখ্যা শুনে সম্রাট খুবই খুশি হলেন এবং তখন তিনি তাঁর আসল পরিচয় দিলেন। এরপর তিনি তাঁর আঙুল থেকে একটি আংটি খুলে সেই যুবকের হাতে দিয়ে বললেন যে তাঁর রাজসভায় এরকমই নির্ভয়ী, রসিক ও বুদ্ধিমান লোকের খুব প্রয়োজন, তাই সে যেন অবশ্যই এই আংটি সঙ্গে নিয়ে তাঁর রাজদরবারে সময় করে দেখা করে। সম্রাট তাকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, যে কোন রাস্তা দিয়ে গেলে আগ্রায় পৌঁছানো যাবে। যুবক নতজানু হয়ে সম্রাটকে অভিবাদন করে, আগ্রায় পৌঁছানোর সঠিক রাস্তাটির হদিশ দিয়ে দিলেন।
ACK - Birbal Stories (3 out of 7) |
সেই যুবকই হলেন "মহেশ দাস", যিনি সম্রাট আকবরের রাজসভায় মন্ত্রিত্ব পদে যোগদান করার সৌভাগ্য লাভ করেন, এবং পরবর্তীকালে সম্রাটের দেওয়া "বীরবল" উপাধিতে ভূষিত হয়ে জগৎবিখ্যাত হয়ে যান।
~ ~ ~ * ~ ~ ~
এই পোস্টে অমর চিত্রকথা থেকে প্রকাশিত বীরবলের অনেকগুলি গল্পের মধ্যে আমার ফেভারিট একটি বইয়ের সবকটি গল্প আপলোড করা হলো, featuring 'Birbal - The Inimitable Birbal'....
Thanks for the Birbal :)
ReplyDeletethanks for BIRBAL .............. & also for the 2nd part of MURDER BY HIGH TIDE
ReplyDeleteদুর্দান্ত। ধন্যবাদ কুন্তল।
ReplyDelete