Saturday, May 14, 2016

যাহা নাই (মহা)ভারতে, তাহা নাই ভারতে

কথায় বলে, "যাহা নাই (মহা)ভারতে, তাহা নাই ভারতে..." - সত্যি কি যে নেই মহাভারতে! আপামর জন-সাধারণের কাছে মহাভারত একটি মহাকাব্য, মানে দেবতাদের কিম্বা দেবাংশজাত নায়কদের নিয়ে লেখা কাব্য। যেহেতু এখানে দেবতারা আছেন, সুতরাং ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ধর্মের। অজ্ঞানতার এমন নজির বোধহয় দুনিয়ায় খুব বেশি মেলে না। প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তিবিদ্যা যে কতো বড়ো ছিলো তা অনুমান করা বড়ো সহজ কথা নয়। 'স্থাপত্য বেদ', 'সমরাঙ্গন-সূত্রধারা' প্রভৃতি গ্রন্থের প্রতি ছত্রে কতো যে প্রাযুক্তিক নির্দেশ লুকিয়ে আছে তা আজও আমাদের জ্ঞানচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে।   
 *  *  *  *  *  * 
... ... ...অর্জুনকে স্বর্গলোকে নিয়ে যাবার জন্যে ইন্দ্রের প্রকান্ড রথ এসেছে। বিমানটির বর্নণা দিতে ব্যাসদেব বলেছেন -- "এমন সময়ে মহামেঘের শব্দের তুল্য গম্ভীর শব্দে সমস্ত দিক পরিপূর্ণ করিয়া মেঘ্সমূহকে যেন বিদীর্ণ করিতে থাকিয়া এবং আকাশমন্ডলকে অন্ধকারশুন্য করিয়া মহাপ্রভাবশালী মাতলিসংযুক্ত ইন্দ্ররথ আগমন করিলো। সেই বিমানে  বায়ুর ন্যায় বেগশালী অশ্বাকৃতি দশহাজার  চালকযন্ত্র ছিলো, যন্ত্রগুলি নয়নার্ষক সেই দিব্য বিমানকে বহন করিতো..."  মাতলি অর্জুনকে বিমানে আরোহন করতে বলায় অর্জুন বললেন, "তুমি রথে উঠিয়া অশ্ব্গুলিকে স্থির করিলে পর ওই রথে আরোহণ করিবো। অর্জুনের সেই কথা শুনিয়া ইন্দ্রসারথি মাতলি সত্ত্বর রথে আরোহণ করলেন এবং রশ্মি দ্বারা অশ্বগুলিকে সংযত করিলেন"। মাতলি 'রশ্মি দ্বারা অশ্বগুলিকে সংযত' করলেন, এই ব্যাখায় একটা জিনিষ ভারী অদ্ভুত, সেটি হলো 'রশ্মি' - 'বল্গা' নয় কেন ? এক্ষেত্রে বুঝতে  হয়না যে রশ্মির অর্থ লাগাম নয়, আর অশ্বের অর্থও, ঘোড়া নয়। 


 *  *  *  *  *  * 
... ... ... অনেক পরীক্ষা, আর অধ্যাবসায়ের পর পান্ডুনন্দন অর্জুন পেয়েছিলেন 'পাশুপাত' অস্ত্র - যে অস্ত্র কিনা সকল অস্ত্রের প্রতিষেধক দিব্য অপ্রতিরোধ্য অস্ত্র। অস্ত্রটি যে কি পরিমান ভয়ঙ্কর তা বোঝাবার জন্যে মহাদেব বলেছেন -- "আমার এই অস্ত্র কখনো কোনো মানুষের উপর প্রয়োগ করিবে না। হীনতেজ বিপক্ষের উপর ইহা নিক্ষেপ করিলে সমস্ত জগৎকে ধ্বংস করিয়া ফেলিবে। শত্রুগণের দ্বারা অত্যন্ত পীড়িত হইলে, সেই প্রাণসঙ্কটে তখন আত্মরক্ষার জন্যে ইহার প্রয়োগ করিতে পারো। শত্রুগণের অস্ত্রসমূহকে প্রতিরোধ করিতেও সর্বদা ইহার প্রয়োগ করিতে পারো।   "এরপর বরুণ দিলেন "বারুণ  পাশ" - যম দিলেন "দন্ড  অস্ত্র" - কুবের দিলেন 'অন্তর্ধান' নামা প্রসিদ্ধ অস্ত্র। ইন্দ্রের কাছে পেলেন 'বজ্র' এবং অনান্য 'বৈদ্যুতিক অস্ত্র' এবং তা প্রয়োগের শিক্ষা। এতো সব দিব্যাস্ত্র সংগ্রহ করে অর্জুন ফিরে এলেন ভায়েদের কাছে। স্বভাবত:ই তাঁরা সেই সব অস্ত্রের ক্ষমতা একটু দেখতে চাইলেন - অর্জুন দেখাতে রাজীও হলেন। কিন্তু একটির প্রয়োগেই "পর্বতসমূহ বিদীর্ণ হইতে লাগিলো, বায়ুর প্রবাহ বন্ধ হইলো..." - নারদ তাড়াতাড়ি এসে বললেন, "হে অর্জুন, এই অস্ত্রগুলি লক্ষ্য ব্যতিরেকে কখনো প্রয়োগ করিতে নাই, আবার লক্ষ্য বর্তমান থাকিলেও নিজে অত্যন্ত সঙ্কটে  না পরিলে উহাদিগকে প্রয়োগ করিবে না। এই দিব্যাস্ত্রগুলি অনুচিতরূপে প্রয়োগ করিলে মহা অনর্থ হইবে। শাস্ত্রানুসারে এই অস্ত্রসমূহ শুধু সুরক্ষিত করিয়া রাখিলেই অস্ত্রগুলি বলবান থাকে ও সুখের কারণ হয়, ইহাতে সন্দেহ নাই। এইগুলি সুরক্ষিত করিয়া না রাখিলে ইহারা ত্রিলোকের নাশের কারণ হয়।" - সুতরাং প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তিবিদ্যা যে কতো বড়ো ছিলো তা অনুমান করা বড়ো সহজ কথা নয়।

 *  *  *  *  *  * 

আজকের এই পোস্টে আমি সেই ছোটবেলাকার 'শিশু সাহিত্য সংসদ' থেকে প্রকাশিত 'ছবিতে মহাভারত' চিত্রকাহিনীটি তুলে ধরলাম। একসময় এর প্রতিটি পাতা প্রায় আমার মুখস্থ ছিলো - আশা করি আমার মতো অনেকেরই হয়তো এটিকে আবার করে পড়তে ভালো লাগবে। 


ছবিতে মহাভারত
(SIZE: 22.3 MB)




   

12 comments:

  1. সুন্দর একটি বই সুন্দরভাবে স্ক্যান করে দিয়েছেন…আর কি চায়।

    ReplyDelete
  2. Onek Dhonyobad !!

    ReplyDelete
  3. Concised story - read so many times in my childhood - the print quality was better at then.

    ReplyDelete
  4. khub ভালো লাগত সেইসময়। শিশু সাহিত্য সংসদের একটা এইরকম রামায়ণের বই ও ছিল মনে হচ্ছে ।
    somoyয় সুযোগ পেলে কয়েকটা comics revue দেবার অনুরোধ জানিয়ে রাখলাম ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয় - একটু সময় করে দেওয়া যাবে।

      Delete
  5. কুন্তলদা অমি তোমার জন্য ৩ রঙের পুরানো প্রিন্ট একটা রেখে দিচ্ছি,সামনেরবার যখন আসবে দেশে তখন আশাকরি আবার দেখাকরে এটা একটা দেবো তোমাকে ।

    ReplyDelete
  6. Eta chilo,r chilo Ramayan(pub mone nei). Amar monehoyna oisomoy egulo poreni emon keu ache!! Ramayan ta b/w+greyish tone chilo r eta bi-colored(blue?).Ekhono ache boi duto,condition otota bhalona holeo...

    ReplyDelete
    Replies
    1. রামায়ণের পাবলিশার্সও একই ছিলো - দুটোই একই ধরণের কালার কম্বিনেশানে প্রকাশিত হয়েছিলো - তবে এখনকার প্রিন্ট আর আগেকার প্রিন্টের বেশ পার্থক্য আছে।

      Delete
    2. Hmm,tai dekhlam. Asole Ramayan-er duto diff. publication chilo,ami jeta bolte chaichilam seta 'Narayan pustokaloy' theke paowa jeto,by Upendra kishor RC,cover-art chilo Raam Bali-ke tirbiddho korchen. SSS-er boidutor size ei Ramayan-er theke kichuta boro.

      Delete
  7. Onek Din Nacklace Kando...Kichu Update Nei...Sesh Korar Onurodh Rakhchi...

    ReplyDelete