আমার পড়া টিনটিনের প্রথম অ্যাডভেঞ্চার ছিলো "কাঁকড়া রহস্য", সৌজন্যে সেই বড়ো সাইজের "আনন্দমেলা" পত্রিকা। সেই বছরেই বাবার হাত ধরে আমি গুটি গুটি পায়ে হাজির হলাম গিয়ে ময়দানে, কলকাতা-বইমেলায়। মেলায় ঢুকে 'টিনটিনের বিজ্ঞাপন' সাঁটকানো এক ইংরেজী পাবলিশার্সের স্টলে ঢুকলাম - উদ্দেশ্য একটাই, টিনটিনের একটা নতুন বই কেনা। স্টলে ঢুকে দেখলাম বিশাল হলের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় একটা বড় টেবিলের সিংহভাগ জুড়ে স্তুপাকারে রাখা হয়েছে টিনটিনের বেশ কয়েকটি অ্যাডভেঞ্চার কমিকস - প্রতিটি গল্পের অন্তত: খান তিরিশেক করে কপি রয়েছে - পেপারব্যাক হলেও বাইন্ডিং বা পাতার কোয়ালিটি, কোনোটারই তুলনা হয়না। এক নিমেষে সেখান থেকে তুলে নিলাম "The Crab With The Golden Claws" কমিকসটা !! অথচ টিনটিনের এই গল্পটা আমার অলরেডি পড়া হয়ে গেছে - বস্তুত: টিনটিনের এই একটা গল্পই আমার সর্বসাকুল্যে পড়া, তবু কেন যে ঠিক সেইটাই আমি পকেটখালি করে কিনে ফেললাম, তার কোনো যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয় - এটাকেই হয়তো বলে 'যুক্তিহীন ভালোবাসা'। সেই সময়ের ভারতীয় টাকায় ডলারের দাম ছিলো ১৮টাকার একটু বেশি - তাই, ওই একটা বই কিনতেই আমাদের দুজনের পকেটেরই বেশ করুন অবস্থা! বাবা তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি যে অ্যাতো টাকা ব্যয় করে আমি একটা সামান্য কমিকস বই কিনবো, কিন্তু আমার মুখচোখের অস্বাভাবিকতা দেখে আর না-বলতে পারেননি !!
বেশ কয়েক বছর বাদে এলো টিনটিনের দ্বিতীয় বই: "The Calculus Affair" - ঢাকুরিয়ার গোলপার্কের এক পুরানো বইয়ের দোকান থেকে, আশির দশকে - অনেক দর-কষাকষির পর দাম নিয়েছিলো ১৪টাকা। তখন ইংরেজী বইপড়ায় একেবারেই অভ্যস্ত ছিলাম না - অগত্যা A.T. Dev-এর গোদা ডিকশনারি সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়েছিলো আমার ট্রান্সলেট করে করে টিনটিন পড়ে চলা। ক্যুইক রেফারেন্সের জন্যে অঙ্কের খাতা থেকে সাদা পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে সেই কমিকস বইয়ের দু'পাতার মাঝে, আলাদা করে গুঁজে দিতাম। সেই সাদা পাতাতে লেখা থাকতো ওই দুই পাতার অজানা ইংরেজি শব্দগুলোর বাংলা মানে। ট্রান্সলেশনের ভূতটা হয়তো সেই তখন থেকেই আমার মাথার মধ্যে গেঁড়ে বসতে শুরু করেছিলো !! ইতিমধ্যে ফেলুদার 'সোনার কেল্লা' বড়ো পর্দায় দেখে ফেলেছি - ট্রেনেতে বসে তোপসের টিনটিন পড়ে চলা দেখে আমিও বেজায় প্রভাবিত। তাই পুরী বেড়াতে যাবার সময় তোড়জোড় করে টিনটিনের কমিকস বইটি মলাট দিয়ে, সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া হলো, ট্রেনেতে পড়ার জন্যে। কিন্তু ট্রেনের ঝাঁকুনিতে পাছে বইয়ের অযত্ন হয়, এই আশঙ্কায় সেই বই আমি কোলে করে বসে, না-খুলেই সময় কাটিয়ে দিলাম - নিজেও পড়িনি, কাউকে পড়তেও দিই নি !!
নিজের কথা ছেড়ে এবার আসা যাক একটু ইন্টারেস্টিং ব্যাপারে। ইন্টারনেটের দৌলতে আজকাল টিনটিনের বেশীরভাগ 'টিপস/ট্রিভিয়া' ফ্রীতেই পড়তে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে নিকোলাস স্যাবোরিন-এর সাইটটি ছিলো চমৎকার, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: সেটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জিম বেলা বলে এক ভদ্রলোক টিনটিনের বিভিন্ন বইয়েতে থাকা ছোটখাটো ভুল-ত্রুটিগুলো একসাথে জড়ো করে এক বিশাল তালিকা বানিয়েছেন। আগ্রহী পাঠকেরা ওখানে একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।
আর্টিস্ট হিসাবে হার্জ ছিলেন খুঁটিনাটি-ডিটেলেসের ব্যাপারে অসম্ভব মনোযোগী। কোনও গল্প শুরু করার আগে তিনি সেই গল্পের প্লট বা চরিত্রদের নিয়ে নানান রকম অ্যাঙ্গেল দিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিতেন। অজস্র ফটো, ছবির কাটিং সংগ্রহ করতেন, পরবর্তীকালে সেগুলোকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করে ছবি আঁকতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু ভুল অজান্তে তাঁর নজর এড়িয়ে গিয়েছিলো। 'মাইকেল ফার' তাঁর ‘Tintin - The Complete Companion’ বইতে এরকম বেশ কিছু প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন। এগুলির মধ্যে একটি মজাদার ঘটনা উল্লেখ করে আমরা আজকের পোস্ট শেষ করবো।
'ফারাওয়ের চুরুট' প্রথমে বার হয়েছিল সাদা-কালো ভার্সনে - পরে যখন সেটিকে রঙিন এডিশনে বার করা হয়, ততদিনে টিনটিনের 'চন্দ্রলোকে অভিযান'-এর রঙিন এডিশনও প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর সময়ের এই দোটানায় পড়ে গিয়ে হার্জ, একটা ক্রোনোলজিকাল 'কেলো' করে বসেন।
সময়ের দিক থেকে 'ফারাওয়ের চুরুট' হলো গিয়ে 'চন্দ্রলোকে অভিযান'-এর অনেক আগেকার গল্প, কিন্তু গল্পের পাতায় দেখা যায় যে শেখ "পাত্রাশ পাশা" টিনটিনকে তাদের চন্দ্র অভিযানের বইটাই দেখাচ্ছে !! সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে, ভবিষ্যতে হতে চলা চন্দ্র-অভিযানের বইটি ওই শেখের হাতে এলো কি করে ?
বেশ কয়েক বছর বাদে এলো টিনটিনের দ্বিতীয় বই: "The Calculus Affair" - ঢাকুরিয়ার গোলপার্কের এক পুরানো বইয়ের দোকান থেকে, আশির দশকে - অনেক দর-কষাকষির পর দাম নিয়েছিলো ১৪টাকা। তখন ইংরেজী বইপড়ায় একেবারেই অভ্যস্ত ছিলাম না - অগত্যা A.T. Dev-এর গোদা ডিকশনারি সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়েছিলো আমার ট্রান্সলেট করে করে টিনটিন পড়ে চলা। ক্যুইক রেফারেন্সের জন্যে অঙ্কের খাতা থেকে সাদা পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে সেই কমিকস বইয়ের দু'পাতার মাঝে, আলাদা করে গুঁজে দিতাম। সেই সাদা পাতাতে লেখা থাকতো ওই দুই পাতার অজানা ইংরেজি শব্দগুলোর বাংলা মানে। ট্রান্সলেশনের ভূতটা হয়তো সেই তখন থেকেই আমার মাথার মধ্যে গেঁড়ে বসতে শুরু করেছিলো !! ইতিমধ্যে ফেলুদার 'সোনার কেল্লা' বড়ো পর্দায় দেখে ফেলেছি - ট্রেনেতে বসে তোপসের টিনটিন পড়ে চলা দেখে আমিও বেজায় প্রভাবিত। তাই পুরী বেড়াতে যাবার সময় তোড়জোড় করে টিনটিনের কমিকস বইটি মলাট দিয়ে, সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া হলো, ট্রেনেতে পড়ার জন্যে। কিন্তু ট্রেনের ঝাঁকুনিতে পাছে বইয়ের অযত্ন হয়, এই আশঙ্কায় সেই বই আমি কোলে করে বসে, না-খুলেই সময় কাটিয়ে দিলাম - নিজেও পড়িনি, কাউকে পড়তেও দিই নি !!
জাভাতে টিনটিন (২০১৫) |
আর্টিস্ট হিসাবে হার্জ ছিলেন খুঁটিনাটি-ডিটেলেসের ব্যাপারে অসম্ভব মনোযোগী। কোনও গল্প শুরু করার আগে তিনি সেই গল্পের প্লট বা চরিত্রদের নিয়ে নানান রকম অ্যাঙ্গেল দিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিতেন। অজস্র ফটো, ছবির কাটিং সংগ্রহ করতেন, পরবর্তীকালে সেগুলোকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করে ছবি আঁকতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু ভুল অজান্তে তাঁর নজর এড়িয়ে গিয়েছিলো। 'মাইকেল ফার' তাঁর ‘Tintin - The Complete Companion’ বইতে এরকম বেশ কিছু প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন। এগুলির মধ্যে একটি মজাদার ঘটনা উল্লেখ করে আমরা আজকের পোস্ট শেষ করবো।
'ফারাওয়ের চুরুট' প্রথমে বার হয়েছিল সাদা-কালো ভার্সনে - পরে যখন সেটিকে রঙিন এডিশনে বার করা হয়, ততদিনে টিনটিনের 'চন্দ্রলোকে অভিযান'-এর রঙিন এডিশনও প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর সময়ের এই দোটানায় পড়ে গিয়ে হার্জ, একটা ক্রোনোলজিকাল 'কেলো' করে বসেন।
টিনটিন - ফারাওয়ের চুরুট |
~ ~ ~ *ঁ* ~ ~ ~
আমাদের আজকের এই পোস্টে রইলো টিনটিনের এক ইন্দোনেশিয়ান অন্ধ ভক্ত কাকা রাই-এর লেখা ও আঁকা টিনটিনের আরো একটি নয়া অভিযান, "জাভাতে টিনটিন" - তবে এই ধরণের সংক্ষিপ্ত গল্পগুলিকে হার্জের লেখা টিনটিনের মূল গল্পদের সাথে তুলনা করাটা উচিত হবে না, এগুলোকে স্রেফ ফ্যান-ফিকশান (pastiche) হিসাবে পড়াই ভালো ! এই গল্পতে দেখা যায় যে টিনটিন ইন্দোনেশিয়ার সুবিখ্যাত জাভা আইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছেন, এবং লেখক স্বয়ং টিনটিনের সাথে সাথে রয়েছেন, ঠিক যে রকমটি ভাবে আমরা আমাদের কিশোর বয়সে টিনটিনের সাথে মনে মনে রোল-প্লে করে খেলে চলতাম আর কি !!
ধন্যবাদ ধন্যবাদ !! কাকা রাই-কেও এবং তোমাকেও । আমার intro 'তিব্বতে টিনটিন' দিয়ে...তখনও Indrajal পাইনি, তাই বই আকারে টিনটিনই ছিল একমাত্র কমিকস্ জগৎ। ১-২টো comics পরার পর টিনটিন নিয়ে কিছু স্বপ্নও দেখেছিলাম :D ...একটাতে মনে আছে যে তিন-মূর্তি এক bus-journey করছিল আর art landscape-wise ছিল(landscape pattern দেখার কারণ আজও বুঝিনি!)
ReplyDeleteহে: হে: - মনে হয় হাত-পা ছড়িয়ে, চিৎ হয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলে !!
DeleteThank you !! Durdhorsho !!
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো - অনেক ধন্যবাদ কুন্তলদা।
ReplyDeletekuntalda, kaka raier tintin comicsgulo apnar bloge bangla anubad kore ddichhen, darun lagche. Onek dhanyabad. Kichudin age asterx and megic carpet apnar blog theke download korechilam. Etake bangla anubad kore deoya jai na ? nijer bhasai porar mojai alada
ReplyDeletekuntalda, Kaka raier tintin comicsgulo apnar bloge bangla anubad kore dichhen, darun lagche. anek dhanyabad. Asterix and megic carpet apnar blog theke download korechilam. Etake banglai anubad kore deoa jaina ? Nijer vasai porar mojai alada