Sunday, August 3, 2014

শারদ অর্ঘ্য - হিজ মাস্টার্স ভয়েস (HMV)

শরৎ কালের নীল আকাশে , হাওয়ায় পুজোর গন্ধ ভাসে। 
কাশ ফুলের ঐ বনেতে,  খুশির তুফান মনেতে।
বাজলো ঢাকের বাদ্যি,   বই পত্তর বাদ দিই। 

সপ্তমীতে নতুন শাড়ি,  ডাক পড়েছে পুজোর বাড়ি।
মহাষ্টমীর অঞ্জলি, আনন্দে মন চঞ্চলই। 
নবমীতে মন কাঁদে , যাওনা মাগো ক'দিন বাদে।
যাবেই যদি শিবের ঘরে,  আসবে তো মা বছর পরে?

আবার আরেকটা পূজা এসে গেলো। ছোটবেলার দিনগুলোতে পূজার বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতাম পূজাতে বার হওয়া নতুন বইয়ের জন্যে। পূজাবার্ষিকী, মানে দেব সাহিত্য কুটিরের পূজাবার্ষিকী তো বটেই - কিন্তু "শারদ অর্ঘ্য" শুধু সাহিত্যের জগতেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতো না। সেই সময় প্রতিটি বছরই, মহালয়ের সময়ে নিয়ম করে "হিজ মাস্টার্স ভয়েস (HMV)", অর্থাৎ 'দি গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়া' প্রকাশ করতেন একগাদা গুণী ও জনপ্রিয় শিল্পীদের গাওয়া, সেই বছরের পূজার নতুন নতুন গানের কথা, ছবি ও সাক্ষর সহ একগুচ্ছ নতুন রেকর্ডের শারদ অর্ঘ্য - যাকে বলে "গানের পূজাবার্ষিকী"। সঙ্গীতপিপাসু বাঙালী শ্রোতাদের কাছে সেই শারদ অর্ঘ্যের আকর্ষণ ও চাহিদাও কিছু কম ছিলো না।     

কিছুটা ম্যাগাজিনের আদলে করা, লম্বাটে সাইজের এই বইতে ভরা থাকতো সেই বছরের নানান শিল্পীদের গাওয়া গানগুলির 'কথা' (lyrics), গীতিকার-সুরকারের নাম, শিল্পীর ছবি এবং রেকর্ডের নানান তথ্য। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, শ্যামল মিত্র, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্য, তরুণ বন্দোপাধ্যায়, শচীন দেব বর্মন, রাহুল দেব বর্মন, কিশোরকুমার, অমিতকুমার, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সবিতা চৌধুরী, রাণু মুখোপাধ্যায়আরতি মুখোপাধ্যায়, আরো, আরও অনেকে  - কাকে বাদ দিয়ে কার কথা উল্লেখ করবো !!  তবে শুধু আধুনিক গানই নয়, কবিতা, আবৃত্তি, ছোটোদের ছড়া, নাটক-যাত্রাপালা, চন্ডীপাঠ, স্ত্রোত্রপাঠ, রবীন্দ্র-নজরুল-দিজেন্দ্রগীতি, শ্যামাসঙ্গীত, কীর্তনগীতি, কৌতুকগীতি, রাগপ্রধান, লালনগীতি, পল্লীগীতি, যন্ত্রসঙ্গীত, ইত্যাদি আরো বিভিন্ন স্বাদের রেকর্ডের খবর ভরা থাকতো এই বইগুলির পাতায় পাতায়। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রতিষ্ঠিত, নামীদামী, জনপ্রিয় শিল্পীদের অগ্রাধিকার থাকতো - তাই তাঁদের গাওয়া গানের কথা স্থান পেতো বইয়ের প্রথম দিকে, সঙ্গে থাকতো তাঁদের পাতা-জোড়া ছবি। স্বল্পখ্যাত শিল্পীদের গাওয়া গানগুলির ঠাঁই হতো বইয়ের শেষের দিকে, এবং বেশিরভাগ সময়ই তাঁদের ছবি প্রকাশিত হতো না। অনেক সময়ই শুধু রেকর্ডের উল্লেখ করে গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁদের দায়িত্ব সম্পন্ন করতেন।

১৯৭০ সালে HMV থেকে প্রকাশিত হওয়া গানের বই - "শারদ অর্ঘ্য" 

জগতে আনন্দযজ্ঞে ছিলো "সবারই" সাদর আমন্ত্রণ - বিশ্বজিৎ, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, উৎপল দত্ত, ভানু বন্দোপাধ্যায়, হেমা মালিনী (বোম্বে/হিন্দী) - এঁরা ছিলেন ছায়াছবির জগতে এক একজন দিকপাল নক্ষত্র। কিন্তু তাঁরাও যে HMV-র এই শারদ অর্ঘ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতেন, তার খবর আমরা অনেকেই জানি না। অল্প-রঙীন, একটু মোটা কাগজের, ৩০-৩৬ পাতার এই বইগুলির দাম ঠিক কতো ছিলো, তা এখন আর মনে পড়ে না - তবে গল্পের পূজাবার্ষিকীর থেকে কম দাম হতো। কিন্তু অল্প-স্বচ্ছল, মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে সেটা যোগাড় করাও মুখের কথা ছিলো না - বিশেষ করে পূজার সময়ের একগাদা অন্যান্য খরচের কথা মাথায় রেখে। তাই ইচ্ছা থাকলেও সত্তরের দশকের শেষ দিকের কয়েকটি গানের "শারদ অর্ঘ্য" বই আমরা কিনে উঠতে পারিনি - এখনও ভাবলে দারুণ আপশোষ হয় !!   

তো, কেমন দেখতে ছিলো সেই শারদীয়া গানের বইগুলি? কেমনই বা ছিলো দেখতে সেই সোনা-ঝরা সময়ের শিল্পীদের? এই পোস্টে তুলে ধরা হলো সেই অসংখ্য বিগত শিল্পীদের মধ্যে থেকে মাত্র কয়েকজন গুণী শিল্পীদের গাওয়া কিছু গানের কথা ও তাঁদের সেই সময়ের ছবি। সব বছরের এবং সব শিল্পীদের তথ্য সংকলিত করা সম্ভব হলো না - কারন সেটা হবে বাস্তবিকই বি...শা...ল......





3 comments: